অক্টোবরে ডেঙ্গুতে বছরের সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু
দেশজুড়ে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু এবং সংক্রমণ বাড়ছেই। শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই দেশে ডেঙ্গুতে ৮০ জন মারা গেছেন এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ২২ হাজার ৫২০ জন। এই সংখ্যা বছরের যেকোনো মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে এখন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বর থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে ডেঙ্গু সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমতে পারে। তবে এই হ্রাস খুব সামান্যই হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ১৩৪ জন ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৮৭৯। আর নভেম্বরে মারা যান ১৭৩ জন, হাসপাতালে ভর্তি হন ২৯ হাজার ৬৫২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭৮ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৯ হাজার ৮৬২ জন। কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমান বলেন, বর্তমানে সামান্য নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
'স্বাভাবিকভাবে এই হার আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ পূর্বাভাসে যে ঘূর্ণিঝড় ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা এখন কেটে গেছে। এই পরিস্থিতিতে নভেম্বর মাসজুড়ে অবস্থা স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে হচ্ছে, যা সামগ্রিক পরিস্থিতির একটি পরিষ্কার চিত্র দিতে সহায়তা করবে,' বলেন তিনি।
তবে সাইফুর রহমান সতর্ক করে বলেন, এই সংখ্যা ধীরে ধীরে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে, ডেঙ্গু সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হবে না। 'শুধুমাত্র রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে,' তিনি আরও বলেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কিউলেক্স মশা বাড়ছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে এতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। 'কর্তৃপক্ষকে কেবল ডেঙ্গুর ওপরই নয়, কিউলেক্স মশার সংখ্যা বৃদ্ধির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে,' সতর্ক করেন তিনি।
এই কীটতত্ত্ববিদ ব্যাখ্যা করেন, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিউলেক্সের সংখ্যা আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। অবিলম্বে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
'যেসব পাত্রে আগে পানি ছিল কিন্তু এখন শুকিয়ে গেছে, সেখানে এখনও মশার ডিম থাকতে পারে। এসব পাত্র দ্রুত সংগ্রহ করে সঠিকভাবে অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি সক্রিয় সব প্রজননস্থল শনাক্ত করে ধ্বংস করা জরুরি।'
সাইফুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, এখনই কর্তৃপক্ষের সামনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার উপযুক্ত সুযোগ। তিনি আরও যোগ করেন, 'যদি এখনই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে সাধারণত মার্চ বা এপ্রিলের প্রথম বৃষ্টির পর যে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়তে থাকে, সেটি অনেকটা দেরিতে হবে।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশারও মনে করেন, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা কমতে পারে, তবে এই হ্রাস উল্লেখযোগ্য হবে না।
তিনি এর জন্য তিনটি প্রধান কারণকে দায়ী করেছেন— জলবায়ু পরিবর্তন, বিলম্বিত বৃষ্টিপাত, সিটি করপোরেশনের অদক্ষতা এবং ভাইরাসের অব্যাহত সঞ্চালন।
বাশার বলেন, মহামারিটি কেবল প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ বা মানুষের মাধ্যমেই হ্রাস করা যেতে পারে। 'প্রকৃতি যদি মশা দমন করে, তবে সংক্রমণ কমবে। অন্যথায়, এটি মানুষের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যা করতে বর্তমানে সিটি করপোরেশনগুলো হিমশিম খাচ্ছে, ' তিনি বলেন।
এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, ডেঙ্গুকে শুধু সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব মনে না করে এটিকে স্থানীয় সরকারের সামগ্রিক সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে।
Comments