বরিশালে প্রভাশালীদের দখলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে শোভা রানীর খাল

সরকারি কাগজে কলেমে খাল আছে বাস্তবে নেই। অবৈধ্য দখলদারদের কারনে, খালের জমি দখল করে বসতবাড়ি গড়ে তোলায় খাল এখন সরু ড্রেন। ভরাটকৃত খালের পাড়ে রাস্তার নির্মান করা হলেও তা অর্ধেক প্রভাশালীদের দখলে। বর্তমানে রাস্তাটিরও বেহাল দশা।
বরিশাল নগরীর ১১ নং ওয়ার্ডের বিআইপি শাখা সড়ক যেটা একসময় শোভা রানীর খাল ছিল। এখন সেটা রাস্তা তাও ভাঙ্গাচোরা। সম্প্রতি সিটি করপোরের্শন এই রাস্তা দখল করে থাকা সকল স্থাপনার প্লান কিংবা অনুমোদনের কপি চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন। পাশাপাশি দখল হওয়া সীমানায় লাল দাগ দিয়েছেন।
এলাকার বাসিন্দা মো. আকন কুদ্দুস বলেন, ইতিপূর্বে একাধিক বার লাল দাগ দিলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। কেননা এই রাস্তার দখলবাজরা অনেক প্রভাবশালী। তারা আগের মেয়রদের নানা ভাবে ম্যানেজ করেছেন। যাতে করে তাদের উচ্ছেদ করা না হয়। সাধারন মানুষের দাবি অতি দ্রুত এই খালের ড্রেন কে প্রসস্ত করা সহ রাস্তাটি সংস্কার করা হোক। যাতে করে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে এলাকার মানুষ।
ওই এলাকার বাসিন্দা ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মো. বজলু বলেন, আশির দশকে কীর্তনখোলা নদী থেকে সাগরদী হয়ে শোভারানীর খাল থেকে চাঁদমারি খালে মানুষ নৌকা টলার যোগে যাতায়াত করত। এইখালে আমরা মাছ ধরেছি গোসল করেছি। সেই খাল আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কে বা কারা এই খালের জমি বিক্রি করেছে, সেটা সরকারের খুঁজে বের করা উচিত। এখন খালতো নেই রাস্তা করা হয়েছে সেটার অবস্থাও বেহাল। গত ১৫ বছরে এই রাস্তার কোন কাজ না হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স ফায়ার সার্ভিস কিছুই আসতে পারেনা। বৃষ্টির দিনে পানি জমে থাকে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই।
সরকারি হিসেবে খালের জমিত অবৈধ্য ভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনার মালিকরা বলছেন উল্টো কথা। তাদের দাবি নিয়ম মেনে স্থাপনা নির্মান করেছেন তারা।
তৎকালীন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ খালের দক্ষিণপাশে দীঘির পাড়ের রাস্তা এবং ড্রেনটি বড় করা হলেও পরবর্তী মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে ম্যানেজ করায় এই রাস্তাটি দখল মুক্ত ও সংস্কার কাজ হয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলছে, বরিশাল নগরীতে খালগুলো উদ্ধারে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শোভা রানির খালটি এভাবে উধাও হয়ে গেছে এটি আরও আগে উদ্ধার করা উচিত ছিল।
তিনি আরো বলেন, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পাশাপাশি সড়ক এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরো প্রশস্ত করা প্রয়োজন। সরকারি দলিল পর্চায় শোভারানীর খালের জমি থাকলেও সে জমি এখন কোথায় আছে সেটা বের করা দাবি জানাচ্ছি।
তবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওসার কড়া হুশিয়ারি দেয়েছেন এবং সময় বেধে দিয়েছেন কোন সরকারী জমি কিংবা খাল দখলাকারীদের ছাড় দেয়া হবেনা। ইতিমধ্যে দখলকৃত স্থাপনায় লাল দাগ দেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই শোভারানীর খালের জমি উদ্ধার করা সহ রাস্তা প্রশস্ত করা হবে।
স্বাধীনতার পর সরকারি হিসেবে ২২ থেকে ২৩টি খালের অস্তিত্ব ছিল বরিশালে। তার মোধ্যে শোভা রানীর খাল অন্যতম। সাগরদী খাল হয়ে চাঁদমারী খালে মিলিত হয়ে ছিল এই শোভা রানীর খাল।
Comments