রাত জাগার অভ্যাসে নিজের ভয়াবহ ক্ষতি করছেন না তো?

দেশের প্রায় সব কর্মস্থল এখন আধুনিক। আর আধুনিক কর্ম-পরিবেশ হওয়ায় কাজের নিয়ম যেমন পরিবর্তন হয়েছে, একইভাবে কঠোর সময়সীমা এবং কাজের সময়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু কর্মস্থল রয়েছে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা হয়। এ কারণে সেসব জায়গায় রাতে কাজ করা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
রাতে কাজ করা স্বাভাবিক মনে করা হলেও অধিকাংশ মানুষই জানেন না, নীরবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলার বিষয়টি। রাত জেগে কাজ করার সংস্কৃতি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন ফার্টিসিটির প্রিস্টিন কেয়ারের চেয়ারপারসন এবং প্রধান আইভিএফ পরামর্শদাতা ডা. ইলা গুপ্তা।
এ চিকিৎসক জানিয়েছেন, রাত জেগে কাজ করার সংস্কৃতিক নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে সন্তান ধারণ বা প্রজনন করার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, আমাদের শরীর একটি প্রাকৃতিক ছন্দ অনুসরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমরা দেরি করে কাজ করলে এই ছন্দ ব্যাহত হয়। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য উর্বরতার ওপর প্রভাব ফেলে।
ডা. ইলা গুপ্তার মতে―চিকিৎসা গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘুমের চক্র সরাসরি প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। অনিয়মিত চক্র হরমোনগুলোকে বিরক্ত করে, ডিম্বাণু ও শুক্রানুর গুণগত মান হ্রাস করে এবং চাপ সৃষ্টি করে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
এ চিকিৎসকের মতে, রাত জেগে কাজ করার কারণে নারীদের মাসিক চক্র প্রায়ই পরিবর্তন হয়। ঘুম কম হলে শরীর কম মেলাটোনিন তৈরি করা শুরু করে, যা ডিম্বাণুর স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি হরমোন। অন্যদিকে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি, যা স্ট্রেস হরমোন। এই ভারসাম্যহীনতা ডিম্বস্ফোটন চক্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমায়।
এদিকে পুরুষের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঘুমের ধরণ টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমায়। এ ব্যাপারে ডা. ইলা গুপ্তা বলেন, আমরা প্রায়ই দম্পতিদের কোনো স্পষ্ট জটিলতা ছাড়াই বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে লড়াই করতে দেখি। তাদের জীবনধারা ও গভীর রাতের কাজের সময়সূচিই মূলত এর পেছনের লুকানো কারণ।
মানসিক চাপ:
ডা. ইলা গুপ্তা জোর দিয়ে বলেন, মানসিক চাপ শুধু মনকেই প্রভাবিত করে না। এটি কোষীয় স্তরেও শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। উর্বরতার জন্য চাপ ধূমপান বা অ্যালকোহলের মতো ক্ষতিকর। যারা গভীর রাতে কাজ করেন তাদের শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তারা প্রায়ই খাবার এড়িয়ে যান, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করেন এবং অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভর করেন। মানসিক চাপের সঙ্গে দুর্বল পুষ্টি প্রজনন স্বাস্থ্যকে বেশ দুর্বল করে দেয়।
সন্তান প্রজনন বা ধারণে বিলম্ব:
ডা. ইলা গুপ্তা উল্লেখ করেছেন, রাত জেগে কাজের সংস্কৃতির প্রভাব ব্যক্তির বাইরেও প্রভাব ফেলে। যেমন- পরিবার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। অনেক দম্পতির ক্যারিয়ার গড়ার সময় মা-বাবা হওয়া বিলম্ব হয়ে পড়ে এবং তারা যখন সন্তান নেয়ার চেষ্টা করেন, তখন বয়স সন্তান ধারণে প্রভাব ফেলে আরেকটি বাধা সৃষ্টি করে।
৩০ বছর বয়সী দম্পতিরা দ্রুত সন্তান নেয়ার জন্য তখন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উর্বরতা হ্রাস পায়। রাত জেগে কাজের সংস্কৃতি এই জটিলতাকে ত্বরান্বিত করে। এ জন্য সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানান এ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ।
সমাধান কী:
এ ব্যাপারে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইলা গুপ্তা বলেছেন, আমরা সবসময় কাজের চাহিদা বা সময়সূচি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে আমাদের জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। যা আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভালো। অর্থাৎ, জীবনযাত্রার সহজ পরিবর্তনের পরামর্শ তার। এর মধ্যে ঘুমের সময়সূচি নির্দিষ্ট করা, ঘুমের আগে স্ক্রিন টাইম কমানো বা সীমিত করা এবং খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার রাখা। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন এ চিকিৎসক।
Comments