পটুয়াখালীতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের অভিযোগ

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ইউনিয়নের গইনখালী বাজারে প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল পাশার শালিস বাণিজ্য, প্রহসন ও স্থানীয় যুবক শিমুল ফরাজিকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে সাধারণ মানুষের ব্যানারে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, কামাল পাশা দীর্ঘদিন ধরে শালিসের নামে ব্যক্তিস্বার্থে বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেন। সম্প্রতি তিনি নিরীহ যুবক শিমুল ফরাজিকে ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন চালাচ্ছেন। অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল ইউনিয়নের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্মসূচি শেষে প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল পাশা ও তার সঙ্গে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলে আসা ছয়জন ব্যক্তি আন্দোলনকারীদের ফাঁসাতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ইউডিসি উদ্যোক্তার কক্ষে ভাঙচুর করা হয়। চেয়ার-টেবিল, দরজা ও কম্পিউটার ভাঙচুরের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নথিও নষ্ট করা হয়। তবে চেয়ারম্যানের নিজ কক্ষ অক্ষত থাকে।
স্থানীয়দের দাবি, এটি ছিল পরিকল্পিত ভাঙচুর, যাতে আন্দোলনকারীদের দায়ী করা যায়। তারা দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
স্থানীয় সোহরাব মাতুব্বর বলেন, কাজ শেষ করে বাজার থেকে পুরানব্রিজ আসার পর দেখি পরিষদ ভাঙচুর হচ্ছে। ভয়ে আমি পরিষদের দিকে আর যাইনি, সোজা বাড়ি চলে আসি। তখন দেখি চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন ভাঙচুর করছে। এমনকি টেলিভিশনের মতো বড় একটি জিনিসও তারা ভাঙছিল।
স্থানীয় হারুন ফরাজী জানান, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন শেষে আমি বাড়ি যাচ্ছিলাম। পরে বাজারে কাজ থাকায় আবার বাজারে যাই। পরিষদের কাছে গিয়ে ভেতর থেকে বিকট শব্দ শুনি। একটু সামনে যেতেই দেখি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পাশা ও রেশাদ খলিফা ভাঙচুর করছে। ভেতরে আরও অনেকে ছিল, তবে তাদের স্পষ্ট দেখা যায়নি। যেহেতু পাশার বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছে, তাই আন্দোলনকারীদের ফাঁসাতে তারা ভাঙচুর চালিয়েছে বলে আমার ধারণা।
অন্য স্থানীয় জাহিদ হাওলাদার বলেন, মানববন্ধন শেষে আমি বাজারে গিয়েছিলাম। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দেখি ৫-৬ জন মিলে ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুর করছে। কামাল পাশার সঙ্গে তার শালাও এ ঘটনায় যুক্ত ছিল।
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল পাশা বলেন, বায়েজিদ কালু দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রকল্প ও জেলেদের সহায়তার চাল থেকে অবৈধভাবে চাঁদা দাবি করে আসছে। আমি রাজি না হওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। শুক্রবার আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোকজন নিয়ে আমার বাসার সামনে আসেন। আমাকে না পেয়ে তারা পরিষদ কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন এবং নথিপত্রসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে যায়। এটি দুজন প্রত্যক্ষ করেছেন। তবে নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি কারও নাম বলতে পারেননি।
রাঙ্গাবালী উপজেলার যুবদল নেতা বায়েজিদ আহমেদ কালু বলেন, "মানববন্ধন শেষে লোকজন চলে যায়। ভাঙচুরের ঘটনা চেয়ারম্যানের লোকজন ঘটিয়ে দায় আমাদের ওপর চাপাচ্ছেন।
রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম হাওলাদার জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে।
Comments