ঐতিহাসিক শিক্ষা আন্দোলনে নিহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির দাবি

"শিক্ষা দিবসের মতো আমাদের এত বড় একটি ঐতিহাসিক অর্জন থাকলেও নতুন প্রজন্ম এটির সঙ্গে পরিচিত নয়।" ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক শিক্ষা আন্দোলনে নিহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির দাবি জানান ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ঐতিহাসিক 'শিক্ষা দিবস' উপলক্ষে শিক্ষা অধিকার চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক বলেন, 'আজ মহান শিক্ষা দিবস। ১৯৬২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, জাতিগত নিপীড়ন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না জানা আরও অনেকেই। তাদের স্মরণে এই দিনকে শিক্ষা দিবস হিসাবে পালন করা হয়।সেই আন্দোলনের বিজয় অর্জন করতে যারা শহীদ হয়েছেন সেই সকল বীর সৈনিক শহীদদের আজকের এই দিনে শিক্ষা চত্বরে দাঁড়িয়ে স্বরণ করছি এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। শিক্ষা দিবসের মতো আমাদের এত বড় একটি ঐতিহাসিক অর্জন থাকলেও নতুন প্রজন্ম এর সঙ্গে পরিচিত নয়। শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, সেদিন যদি ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন সংগঠিত না হতো তাহলে আমরা হারাতাম আমাদের শিক্ষার অধিকার। হয়তো আমরা ভুলে যেতাম আমাদের কৃষ্টি-কালচার ও মাতৃভাষা।'
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হচ্ছে ২৪ এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে তাদের পক্ষ থেকে, এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটিও কর্মসূচি নেই - একটি ক্রোড়পত্র নেই - রাষ্ট্রীয় কোনো ধরনের কর্মসূচি নেই, ভাবতেই অবাক লাগে কিভাবে
আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা যাবে? সেই সাথে বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষাবীদ ও প্রখ্যাত রাষ্ট্র বিজ্ঞানী- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড এমাজউদ্দীন আহমদ ও প্রখ্যাত সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী মাহফুজ উল্লাহ কে স্বরণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী এডভোকেট মীর নুরুন্নবী উজ্জ্বল বলেন, ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া অগণতান্ত্রিক ও ছাত্র স্বার্থবিরোধী এ শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ তীব্র আন্দোলন ও সংগ্রাম গড়ে তোলে। গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল করে সবার জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণমুখী বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সহজলভ্য আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ আন্দোলন জোরদার করে। ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্ররা শিক্ষাকে পণ্য করার ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে মিছিল বের করলে হাইকোর্টের সামনে পুলিশ গুলি চালায়। এতে শহীদ হন মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজীউল্লাহসহ অনেকে। সেই থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন প্রতিবছর এ দিনটিকে মহান শিক্ষা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে।
শিক্ষা দিবস উপলক্ষে শিক্ষা অধিকার চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন,সংগঠনের সহকারী প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সংগঠনের জুলাই যোদ্ধা যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট হাবিবুর রহমান -।সংগঠনের সদস্য দিলিপ কুমার, মোবাশ্বের হোসেন, নাঈম হাসান, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
Comments