মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে যে অভ্যাসগুলো মানতে পারেন

জীবনের একেকটি ধাপে একেক রকমের দায়িত্ব আসে। সময় আর কাজের সঙ্গে মস্তিষ্কে চাপও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বয়স ৩০ হলেই যেন ভাবনা আরও বেড়ে যায়। যখন কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের চাপ বাড়তে থাকে। আর সব কাজের চাপে মস্তিষ্কের যত্ন নেয়ার সময় হয় না তবে এটা সত্যি গুরুত্বপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সতেজ ও কার্যক্ষম রাখা সম্ভব।
পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, মানসিক প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা এসব অভ্যাস একসঙ্গে মেনে চললে মস্তিষ্ক দীর্ঘদিন সতেজ, সৃজনশীল ও কার্যক্ষম থাকে। তাই সময়োম থেকেই এই অভ্যাসগুলোকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে নেয়া উচিত, যাতে আগামী বছরগুলোতে মস্তিষ্ক সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে। নিউরোলজিস্ট ডা. প্রশান্ত মাখিজা ও ডা. শিবকুমার এই বয়সে মস্তিষ্কের যত্নে করণীয় কিছু মূল পরামর্শ দিয়েছেন। বেশ কিছুনিয়ম মানান পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এগুলো হলো:
পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ
নিউরোলজিস্ট ডা. শিবাকুমার এইচ.আর জানান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, কোএনজাইম কিউ এবং ভিটামিন ডি-এর মতো পুষ্টি অপরিহার্য। আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে এসব পুষ্টি প্রায়ই অভাব থাকে। তিনি বলেন, এই পুষ্টিগুলি শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়াতেই সাহায্য করে না, বরং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ এবং চাপ মোকাবেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের অভাবে মানুষ উদ্বেগ, স্মৃতিভ্রংশ এবং মনোযোগের ঘাটতি অনুভব করতে পারে।
মাইন্ডফুল ডিটক্স
আমাদের মস্তিষ্ক প্রায়ই কর্মক্ষেত্রের চাপ, কম্পিউটার স্ক্রিন এবং দৈনন্দিন জীবনের চাহিদায় অতিরিক্ত উত্তেজিত থাকে। ডা. শিবকুমার বলেন, শান্ত মুহূর্ত না পেলে মস্তিষ্ককে নিজেকে পুনরায় সাজানোর সুযোগ হয় না। এজন্য ডিজিটাল ডিভাইস থেকে সচেতন বিরতি নেয়া এবং নিরব সময় কাটানো অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই ছোট ছোট বিরতি মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় ফিটনেস
প্রজনন বয়স ও পেরিমেনোপজের সময় হরমোনাল পরিবর্তন শুরু হয়, যা স্মৃতি, মেজাজ এবং মনোযোগকে প্রভাবিত করতে পারে। ডা. শিবকুমার বলেন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্ট্রেন্থ ট্রেনিং মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে। নিউরোলজিস্ট ডা. প্রশান্ত মাখিজার মতে ফিটনেস কেবল সুস্থ রাখে না একই সঙ্গে মন চাঙ্গা রাখে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং নতুন মস্তিষ্ক কোষের বিকাশে সাহায্য করে। জার্নালিং, যোগা, মেডিটেশন ইত্যাদি অভ্যাস মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়। ডা. মাখিজা বলেন, চরম চাপ মস্তিষ্ককে ক্ষতি করে ও স্মৃতিশক্তি কমায়। তাই মননশীলতা, জার্নালিং বা থেরাপি আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসের অংশ হওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুম
ডা. মাখিজা ঘুমকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নিজেকে ডিটক্সিফাই করে, স্মৃতি সংরক্ষণ করে এবং পুনরায় সাজায়। ঘুমহীনতাকে কোনো সাফল্যের চিহ্ন হিসাবে দেখবেন না। এই সময় মস্তিষ্কের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি গড়ার সেরা সময়। পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্ককে সতেজ ও কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
সামাজিক সম্পর্ক
অবশেষে, সামাজিক সম্পর্ক মস্তিষ্কের সুখ ও বন্ধন সংক্রান্ত সার্কিট সক্রিয় করে। ডা. শিবকুমার বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকার গুরুত্ব রয়েছে। এটা আপনাকে একাকিত্ব, মানসিক চাপ এবং স্মৃতিশক্তি কমার সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ মস্তিষ্ককে আরও সক্রিয় রাখে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
Comments