বগুড়ার যমুনায় তীব্র ভাঙনে দুশ্চিন্তায় দুই উপজেলার নদীপাড়ের মানুষ

বগুড়ার যমুনার দুই উপজেলার অংশ তীব্র ভাঙনের শুরু হয়েছে। এতে জেলার ধুনট ও সারিয়াকান্দি দুই উপজেলা যমুনা পাড়ের গ্রামগুলোর সমতল ভূমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ। ইতোমধ্যেই সারিয়াকান্দি উপজেলায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৫বিঘা আবাদি জমি। যমুনার অব্যাহত ভাঙনে ধেয়ে আসছে জনবসতির দিকে। এর ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নদী পাড়ের বসতি গড়া মানুষগুলো।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ধুনট উপজেলার যমুনা নদীর ভাঙনরোধে ২০০১ সালে শহড়াবাড়ি ও তার এক কিলোমিটার ভাটিতে বানিয়াজান স্পার নির্মান করা হয়েছে। এই স্পার নির্মানের ফলে শহড়াবাড়ি ও বানিয়াজান গ্রামের মাঝখানে আবাদি জমি ও জনবসতি রক্ষা হয়েছে। কিন্ত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও নদীতে প্রচন্ড স্রোতের কারণে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে পানি নদীপাড়ে আঘাত হানছে।
তবে যমুনা নদীর এই অংশ থেকে প্রতি বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। সেসময় কোনো ব্যক্তি প্রতিবাদ করতে পারত না, প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দিত। এখন তার খেসারত দিচ্ছে এলাকাবাসি। এমনটাই অভিযোগ করছে স্থানীয় ভূক্তভোগীরা।
তাছাড়া নদীতে কয়েকদিন ধরে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তাদের দাবি যতদ্রুত সম্ভব ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। তা না হলে ফসলি জমির সঙ্গে তাদের ঘরবাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যমুনা নদীর ভাঙন স্থান পরিদর্শন করেছেন। আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অন্যদিকে জেলার সারিয়াকান্দিতে গত ২২ আগস্ট যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে একদিনে প্রায় ৫ বিঘা কৃষিজমি বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গন এলাকার প্রায় ২'শ মিটার দুরেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ হুমকিতে রয়েছে। এটি ভেঙে গেলে ৪ ইউনিয়নের লাখো মানুষ বন্যা কবলিত হবেন।
এ ছাড়াও সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গোদাখালি এবং ইছামারা গ্রামে আবারো যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। যেখানে গত ২ বছর আগেও প্রায় ৭০ টি বসতবাড়ি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সেখানে নদী ভাঙন রোধে কাজ করা হয়, ফলে ভাঙন কবলিত এলাকায় নদী ভাঙন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়।
এ এলাকার প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙন। এখানে কৃষকদের ৩ ফসলি কৃষিজমি যমুনায় বিলীন হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। যেখানে ধান, পাট মরিচসহ নানা ধরনের ফসল চাষ হয়। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই প্রায় ৫ বিঘা কৃষিজমি যমুনায় বিলীন হয়েছে।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিমত, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ যেকোনও সময়ে ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে যমুনার মূল স্রোত প্রবাহিত হবে। যা বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলাকে প্লাবিত করবে। ফলে উপজেলার কামালপুর, ভেলাবাড়ী, চন্দনবাইশা এবং কুতুবপুর ইউনিয়নের লাখো এলাকাবাসী বন্যা কবলিত হবে। এছাড়া এসব ইউনিয়নের কৃষকদের সদ্য বেড়ে ওঠা আমন ধান পানিতে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি কাজ চায় এলাকাবাসী।
ভাঙন হুমকিতে থাকা মৃত মইর প্রামানিকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০) জানান, গত বৃহস্পতিবার যেভাবে যমুনা নদীতে ভাঙন হয়েছে, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে আমাদের বাঁধের বাড়িঘরও ভেঙে যাবে। এই শেষ সম্বলটুকু ভেঙে গেলে আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো? আমরা সরকারের কাছে দ্রুত যমুনা নদীর কাজ চাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (নকশা) মাহফুজুর রহমান বলেন, যমুনা নদী ভাঙন রোধে ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী কাজ করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনার ভিত্তিতে স্টাডি চলছে। বগুড়া সারিয়াকান্দি এবং ধুনট উপজেলাকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে প্রকল্প নকশা প্রনয়ন পূর্বক একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে বগুড়াবাসী রক্ষা পাবে। তবে ভাঙন কবলিত এলাকায় ইমার্জেন্সি কাজ চালু করা হয়েছে বলেও দাবী করেন এই কর্মকর্তা।
Comments