ডাকসু নির্বাচন ২১ জনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার, মবের আশঙ্কা ছাত্রদলের

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আমেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। মোট ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ইশতেহার অনুযায়ী আজ বিকাল ৪টায় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে। আচরণবিধি মেনে প্রার্থীরা আজ থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। তবে প্রচারণায় মবের আশঙ্কা করছে ছাত্রদল।
ডাকসু নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচটি ছাত্রী হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৮টি হল রয়েছে, যেখানে ১৩ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হলসংসদ নির্বাচনে হলগুলোতে ছাত্রদল ছাড়া বাকি কোনো সংগঠন প্যানেল দেয়নি। আর সব হলে প্যানেল দিলেও ১৪টি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পেরেছে ছাত্রদল। তবে ছাত্রীদের পাঁচটি হলের মধ্যে শুধু রোকেয়া হলে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল রয়েছে। এছাড়া কবি সুফিয়া কামাল হলে ৯টি পদে, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে তিনটি পদে, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছয়টি পদে ও শামসুন নাহার হল সংসদে পাঁচটি পদে প্রার্থী দিয়েছে ছাত্রদল। তবে এই চার হলের ভিপি ও জিএস পদে ছাত্রদলের প্রার্থী আছে।
হলগুলোতে প্যানেল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ও ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের ইত্তেফাককে বলেন, হল পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা কেমন হবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সুরাহা হয়নি। অনেক শিক্ষার্থীই আবার হল পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি চায় না। সবকিছু মিলিয়ে আমরা হলগুলোতে প্যানেল ঘোষণা করিনি। তবে হলগুলোতে আমাদের কর্মী রয়েছে। যারা নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করেছে, আমরা তাদের সমর্থন দিয়েছি।
ইসলামি ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান বলেন, হলগুলোতে আমাদের কোনো প্যানেল নেই। আমাদের কর্মীরা যারা হলগুলোতে রয়েছে এবং নির্বাচনের অংশগ্রহণ করছে, তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তারা সেখানে তাদের সুবিধা অনুসারে নির্বাচনি প্রচারণা করছেন।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম বলেন, গুপ্ত সংগঠনগুলো জোনভিত্তিক ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রচারণার সময় আমাদের ওপর গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মবেরও আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নারীদের নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ অভিযোগ করেন তিনি।
আবিদুল ইসলাম বলেন, যদি লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে চান তাহলে প্রশাসনের অবশ্যই এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্রে মূল যে উদ্দেশ্য ছিল, সেখানে লেখা ছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করাই ডাকসুর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ৫ আগস্ট পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে শুধুমাত্র রাজাকার শব্দটা কারা জেনারালাইজেশন করার চেষ্টা করেছিল, কারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে রাজাকারদের ছবি টানিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা করেছে, কারা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাদের ম্যাগাজিনে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা করেছে, কারা বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে একজন প্লেন হাইজ্যাকার বলেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কারা আমাদের জাতীয় সংগীতকে অবমাননা করেছে তা সবাই জানে।
এদিকে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আপিল নিষ্পত্তি ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগসমূহ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল কমিটির গত ২৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখের সভায় জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামীকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
Comments