সুষ্ঠ বিচার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি শহীদ পরিবারের সদস্যদের

২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের বছর পেরিয়ে গেলেও কোন বিচার পাননি পটুয়াখালীর শহীদ জসিম উদ্দিনের পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এরই মধ্যে ধর্ষনের শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছেনেন শহীদ কন্যা লামিয়া। সকল ঘটনার সুষ্ঠ বিচার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়দের।
পায়রা নদীর ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার দক্ষিণ পাংগাশিয়া গ্রামের আব্দুস সোবহান হাওলাদার ও রাবেয়া বেগম দম্পতি। ঢাকায় একটি এনজিওতে ড্রাইভারের চাকুরী করে পরিবারের হাল ধরেন তাদের মেঝ ছেলে মোঃ জসিম উদ্দিন। গ্রামে জমি কিনে বৃদ্ধ মা বাবার জন্য তৈরি করে দেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। বাবা স্ট্রোকের রোগী, মাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, তার উপরে বাড়িতে রয়েছে মৃত বোনের প্রতিবন্ধী কন্যা। স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও তিনি গ্রামে নিয়মিত বাবা মায়ের ভরণপোষণের খরচ পাঠাতেন। এছাড়া ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও চালাতেন তিনি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়
তার আকস্মিক মৃত্যুতে আকুল পাথারে পরে পুরো পরিবার। উপর্জনক্ষম সন্তানের শোকে বিহবল হয়ে পরেন মা রাবেয়া বেগম। মৃত সন্তানের ছবি হাতে নিয়ে প্রতিনিয়ত ফেলেন চোখের জল। কর্মহীন অসুস্থ্য সোবাহান হাওলাদার হিমসিম খাচ্ছেন পরিবার সামাল দিতে। এদিকে ঢাকায় চাকরী করে সন্তানদের মুখে খাবার যোগাতেন শহীদ জসীমের স্ত্রী। কিন্তু বিধি বাম, গত ১৮ মার্চ, পটুয়াখালীর পাংগাশিয়া ইউনিয়নে দাদা বাড়িতে বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন শহীদ জসীমের বড় মেয়ে লামিয়া আক্তার। সাহসিকতার সাথে তিনি নিজেই পরের দিন থানায় গিয়ে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। কিন্তু সামাজিক লজ্জা, অবহেলা এবং ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে গত ২৬ এপ্রিল আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। ঘটনার টানাপোড়েনে ক্ষতবিক্ষত হয় শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
শহীদ জসীম উদ্দিনের মা রাবেয়া বেগম বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দ্রুত ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেয়া হলেও বিচার অধরাই থেকে গেছে ।
শহীদ জসীম উদ্দিনের স্ত্রী রুমা বেগম বলেন সরকারের কাছে দ্রুত বিচার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই। শহীদ জসীম উদ্দিনের বাবা আব্দুস সোবহান হাওলাদার বলেন সরকার যেন আমাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন ।
পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের কৌসুলির পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ রুহুল আমিন সিকদার বলেন আসামিরা হাজতে রয়েছেন মামলার সাক্ষ্যগ্রহন চলছে। দ্রুত সময়ে বিচার সম্পন্ন করাহবে।
পটুয়াখীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন ইতিমধ্যে প্রত্যেক শহীদ পরিবার জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রথম কিস্তির সহায়তা পেয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহনের করা হয়েছে।
সরকারি হিসেব মতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারান পটুয়াখালী জেলার ২৬ জন এদের মধ্যে ২৪ জন ইতিমধ্যে গেজেট ভুক্ত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৬২ জন।
Comments