ইতালির লাম্পেদুসায় নৌকাডুবি: ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারাল অন্তত ২৬ অভিবাসী

ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় লাম্পেদুসা দ্বীপের উপকূলে ভয়াবহ নৌকাডুবিতে অন্তত ২৬ অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। বুধবার (১৩ আগস্ট) ভোরে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক সমুদ্রপথে যাত্রার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে ইতালির কোস্টগার্ড।
তদন্তকারী সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, দুটি নৌকায় মোট ৯২–৯৭ জন আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী লিবিয়া থেকে রওনা হয়েছিলেন। যাত্রাপথে একটি নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করলে আতঙ্কিত যাত্রীরা পাশের ফাইবারগ্লাস নৌকায় উঠে পড়েন। অতিরিক্ত যাত্রীর ভারে সেটি অল্প সময়ের মধ্যেই ডুবে যায়।
ঘটনাস্থল লাম্পেদুসা থেকে প্রায় ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৩ কিমি) দূরে। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় ইতালির কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ ও রেডক্রসের সদস্যরা। অভিযানে ব্যবহৃত হয় ৫টি জাহাজ, ২টি বিমান এবং ১টি হেলিকপ্টার।
এ পর্যন্ত অন্তত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বেঁচে যাওয়া ৬০ জনের মধ্যে ৫৬ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা। আহত ৪ জনকে লাম্পেদুসার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে সমুদ্র ও আকাশপথে অনুসন্ধান চলছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানায়, "এই পথটি বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী অভিবাসন রুটে পরিণত হয়েছে।" ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারাও উদ্ধার অভিযানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, "এ ধরনের ট্র্যাজেডি রোধ করতে হলে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।"
লাম্পেদুসা দ্বীপ উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপগামী অভিবাসীদের প্রধান প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত। বিপজ্জনক নৌযাত্রার কারণে প্রায়ই ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। শুধু চলতি বছরেই (২০২৫) কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগর দিয়ে যাত্রার সময় অন্তত ৬৭৫ জন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও বেশি।
ইতালির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজারের বেশি অভিবাসী সমুদ্রপথে ইতালিতে পৌঁছেছেন। যদিও ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা কম, কিন্তু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
তথ্যসূত্র: ইতালিয়ান কোস্টগার্ড, UNHCR, এপি নিউজ, রয়টার্স, আল জাজিরা
Comments