জোটসঙ্গীর প্রতীকে ভোট করতে পারবে অনিবন্ধিত দল

অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো জোটসঙ্গী বড় রাজনৈতিক দলের প্রতীক আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায়—এই সুযোগ মিলবে অনিবন্ধিত দলের জন্য। কিন্তু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো জোট করলেও নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করতে হবে। এতে বরং জয়-পরাজয়ের ঝুঁকি তৈরি হবে। কেননা বাংলাদেশের ভোটাররা বড় দলের প্রতীকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনের কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কোনো লিগ্যাল স্ট্যাটাস নেই। ফলে তারা নিজস্ব সত্তা ছেড়ে অন্য দলের প্রতীকে ভোট করলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ এখন পর্যন্ত কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সদস্য পদ থাকার মেয়াদ সংক্রান্ত কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জোট করতে পারবে তবে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে যে এবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান সংযোজন করা হচ্ছে। আগে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি দলের সঙ্গে জোট করার পাশাপাশি বড় দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করতে পারত। এজন্য আরপিওর ২০ ধারায় সংশোধনী আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
বিগত এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন কোনো রাজনৈতিক দলের কাউকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে তিন বছরের বাধ্যবাধকতা রেখেছিল। এই বিধান অনুযায়ী ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিগত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ঐ তিন বছরের প্রাথমিক সদস্য পদ থাকার বিধানটি বিলুপ্ত করেছিল।
এ বিষয়ে জানতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, জোটসঙ্গী হলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে এই বিষয়টি এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। পরবর্তী সময়ে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংসদে পাস হলে এই আইন বাস্তবায়ন করা যাবে। যেহেতু এখন নির্বাচিত সংসদ নাই, তাই আসন্ন নির্বাচনে এমনটা হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে জোটসঙ্গী বা অন্য যে কোনো প্রতীকে কেউ চাইলে নির্বাচন করতে দিতে হবে, কাউকে প্রতীক নির্দিষ্ট করে দেওয়াটা সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করে।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, নির্বাচন কমিশন যে কথিত ফর্মুলা হাজির করেছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নাই। অতীতে আমরা জোটসঙ্গী যে কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারতাম। যতদূর জেনেছি অনিবন্ধিত দলগুলোর এক্ষেত্রে এই বিধানটি প্রযোজ্য হবে না। আমরা বড় দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারব।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটসঙ্গী হয়ে নির্বাচন করাটি একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি-জাপা বরাবরই জোটসঙ্গী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আগামীতেও জোটসঙ্গী হয়ে নির্বাচন করবার ধারা অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিবন্ধিত ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোট করতে পারলেও জোটসঙ্গীর প্রতীক ব্যবহার না করতে পারলে কিছুটা ঝুঁকি তৈরি হবে। সমঝোতার পর এক্ষেত্রে ছোট দলের জন্য জোটসঙ্গী বড় দল তার দলের প্রতীক ব্যবহার হয়তো করবে না। কিন্তু ছোটদলগুলোর জন্য আসন ছেড়ে দিলে তা উদ্ধার করা কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে জোটসঙ্গীর কোনো সদস্য স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে এই ঝুঁকি আরও বাড়বে। আগে জোটসঙ্গীর প্রতীক ব্যবহার করতে পারার কারণে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তেমন সুবিধা করতে পারত না।
Comments