চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার বনভোজন
১০ আগস্ট নিউ ইয়র্কের George's Island Park-এর Pavilion 2-এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন, নর্থ আমেরিকা ইনক-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ২৯তম বার্ষিক বনভোজন। এটি কেবল একটি পিকনিক নয়—ছিল এক মিলনমেলা, এক হৃদয়ের উৎসব। সকাল থেকেই প্রকৃতি যেন অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্য নিজেকে সাজিয়ে রেখেছিল। বাতাসের মৃদু ছোঁয়া, রোদে ঝলমলে আকাশ, আর মানুষের মুখে হাসির ঝলক—সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এক আনন্দঘন পরিবেশ। নিউ ইয়র্কের হৃদয় থেকে ছড়িয়ে পড়া মিলনের সুর নিউ ইয়র্ক এবং আশেপাশের স্টেট থেকে আসা দুই শতাধিক চবিয়ান ও অতিথির প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে এবারের আয়োজন হয়ে উঠেছিল এক অনন্য সম্মিলন। প্রতিটি হাসি, প্রতিটি কোলাকুলি যেন বহন করছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিময় দিনগুলোর উষ্ণতা।
Croissant, কলা, ডিম আর কফির স্বাদে সকালের শুরুটা ছিল প্রাণবন্ত। এরপর পার্কেই রান্না করা হয় সুস্বাদু খাবার। রনি ভাই ও তার দলের হাতে তৈরি বারবিকিউ, মুখরোচক কাচ্চি বিরিয়ানি, তাজা সালাদ, বোরহানি, গোলাপ জাম আর সারাক্ষণের চা—সবকিছু যেন শুধু খাবার নয়, ছিল ভালোবাসার প্রকাশ। প্রতিটি মুহূর্ত পদে ছিল অতিথি পরায়ণতার উষ্ণতা, আন্তরিকতার ছোঁয়া।
সাধারণ সম্পাদক মীর কাদের রাসেল এবং সভাপতি শারমিন নিহার নিরুর নেতৃত্বে পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় সুচারুভাবে। তাদের সঙ্গে ছিলেন শুভাশিস, ফারহানা, নাসরিন, সাইফুল, ইকবাল, মুহিত, দিদার, শিলা, ফরিদা, অনুপ। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত, হৃদয়গ্রাহী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পিকনিক কমিটির আহ্বায়ক ও কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বকুল।
উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য দেন পারভেজ কাজী, মোহাম্মদ হাসেম, দিবাকর সেন, মোসাদ্দেক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম এবং স্বপ্না ইমাম, ডাঃ সায়েরা হক ও তার স্বামী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহল সরকার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সৈয়দ মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সবুর, সন্দীপ সোসাইটির সভাপতি ফিরোজ আহমেদ, চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি মাকসুদুল হক চৌধুরী, মিসেস শাহিদা হাই, শুভাকাঙ্ক্ষী মোকাররম আহমেদ, এবং চিটাগাং রাইজিং স্টারস-এর সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন, আলী নূর, ফরহাদ হোসেন।
বনভোজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল র্যাফেল ড্র। পুরস্কারের তালিকায় ছিল ৪৫" টিভি, ল্যাপটপ, আইফোন, আইপ্যাড, এয়ার ফ্রায়ার, মাইক্রোওয়েভ, স্ট্যান্ড ফ্যান। স্পন্সরদের মধ্যে ছিলেন তারেক আব্দুল্লাহ, মাকসুদা খানম, জি.এম ফারুক, মাকসুদা হক চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ মুনিত, Marks Home Care, মামুন গ্রোসারী, চিটাগাং রাইজিং স্টারস।
পুরস্কার বিতরণ করেন কবিতা সেন, সঞ্জীব তালুকদার, তারেক আব্দুল্লাহ, মাকসুদা খানম, পারভেজ কাজী, মিনারা কাজী, দিবাকর সেন, অধ্যাপক আখতার হোসেন, মোঃ আব্দুল আজিজ নাঈমী, অধ্যাপক গোলাম মোহাম্মদ মুহিত এবং ওয়াহিদুজ্জামান বকুল। এই আয়োজনকে সফল করতে বিশেষ অবদান রেখেছেন কবিতা সেন, সনজীব তালুকদার, মোঃ হুমায়ুন কবির, ডঃ ছায়েদা হক, আবদুল আজিজ নন্দী, অধ্যাপক আতাউর হোসেন, ডঃ আকশ, আবদুল কাদের মিয়া, আইমান নিজাম উদ্দিন, মাইফুজুর রহমান।
এই বনভোজন প্রমাণ করে দিয়েছে—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি পরিবার। যেখানে হাসি, গল্প, স্মৃতি আর ভালোবাসা একসাথে গাঁথা। এই মিলনমেলা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে আত্মিক বন্ধন। প্রবাসে থেকেও আমরা ভুলে যাইনি আমাদের শেকড়, আমাদের মানুষ, আমাদের সম্পর্ক। এই দিনটি ছিল সেই স্মৃতির পুনর্জন্ম। আর এই আনন্দঘন দিনে সুরের জাদু ছড়িয়ে দেন স্বপ্নীল সজীব। তার কণ্ঠে ছিল স্নিগ্ধতা, তার গানে ছিল আবেগের গভীরতা। আমরা যারা বাংলা সংস্কৃতির টানে বড় হয়েছি, তাদের জন্য সঙ্গীত মানেই অনুভবের ভাষা। আর সেই ভাষার অনুবাদক হয়ে স্বপ্নীল সজীব যেন হয়ে উঠেছিলেন আমাদের হৃদয়ের সুর। নিউ ইয়র্কসহ আশপাশের বিভিন্ন স্টেট থেকে দুই শতাধিক চবিয়ান ও অতিথি এই আয়োজনে যোগ দিয়ে অনুষ্ঠানকে করে তুলেছিলেন প্রাণবন্ত ও স্মরণীয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্মৃতি, প্রতিটি মুখ, প্রতিটি মুহূর্ত আজও আমাদের হৃদয়ে জ্বলজ্বল করে। আজকের এই আয়োজন… সেই সোনালি দিনের স্মৃতিগুলোকেই আবারও জাগিয়ে দিলো। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ছিল, দৌড় প্রতিযোগিতা, আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি, উন্মুক্ত মার্বেল দৌড়, ফুটবল খেলা, সুরে সঙ্গীতে স্বপ্নীল সজীব, নতুন এলামনাই পরিচিতি পর্ব, মিউজিক্যাল পিলো, আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য, প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ এবং সভাপতির ধন্যবাদ জ্ঞাপন।
Comments