ভারতকে ন্যাটোর হুমকির পর পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প

চলতি বছরের মে মাসে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যে সামরিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা হঠাৎ করেই পাকিস্তানের বৈশ্বিক অবস্থানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এ ঘটনা পাকিস্তানের জন্য এক ধরনের বিরল কূটনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধা নিয়ে এসেছে। এখন দেশটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজের অবস্থান নতুন করে নির্ধারণ করতে শুরু করেছে। এই সংঘাত বিপজ্জনক হলেও পাকিস্তানের জন্য এক অপ্রত্যাশিত কূটনৈতিক সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের সঙ্গে সংঘাতের শুরু থেকেই চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এবার একদিকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে, অন্যদিকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ভারতকে হুমকি দিচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ না থামালে তাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালানো দেশগুলোর ওপর চাপানো হবে 'সেকেন্ডারি ট্যারিফ' বা আনুষঙ্গিক শুল্ক।
ট্রাম্পের এই হুমকির চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই একই ধরনের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তে। রাশিয়ার সহযোগী দেশ হিসেবে সরাসরি ভারত, ব্রাজিল ও চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ন্যাটোর মহাসচিব বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেলে এই তিন দেশকেও কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
এ অবস্থায় পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই সফর প্রায় দুই দশক পর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইসলামাবাদ সফর হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্প পাকিস্তান সফরে যাবেন।
এর আগে গেল মাসে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বন্ধের নেপথ্যে তার ভূমিকা রয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। তবে ভারত সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোথাও কোনো চুক্তি হয়নি। অর্থাৎ, যুদ্ধ বন্ধে তৃতীয় পক্ষের কোনো মধ্যস্থতা হয়নি।
তবে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে ট্রাম্পের দাবিকে সমর্থন করেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা অসাধারণ কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বলেও প্রশংসা করেছে ইসলামাবাদ।
শুধু তাই নয়, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক জবাব ছিল নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু দৃঢ়। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া অনেক পর্যবেক্ষককে চমকে দিয়েছে। ইসলামাবাদ এক নতুন কৌশলগত আত্মবিশ্বাসেরও বার্তা দিয়েছে। এটি পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
নতুন এ পরিস্থিতিতে কিছু বিষয় বিশেষভাবে নজর কেড়েছে বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, এখন চীন পাকিস্তানের প্রধান কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। আর চীনের পরই রয়েছে তুরস্ক। একই সঙ্গে পাকিস্তানের ভূগর্ভস্থ বিশাল খনিজ সম্পদের দিকে আন্তর্জাতিক আগ্রহ নতুন করে বাড়ছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে।
Comments