সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাকা নিয়ে রোগীকে সেবা দেওয়ার অভিযোগ, খাবারেও অনিয়ম

লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার আশ্রয়স্থল হাইমচর সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।কিন্তু এর স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে রোগীদের রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ। এর মধ্যে টাকা নিয়ে রোগী দেখা ও খাবার ও ঔষধ বিতরণ অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
২ জুলাই বুধবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন, দুদক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেন। তিনি জানান, গত ৩০ জু সোমবারে এক অভিযানে অভিযোগগুলোর সত্যতা পান খোদ হাসপাতালে গিয়েই তার অনুসন্ধানী দল।
চিকিৎসা নিতে আসার রোগীর অভিভাবকড়, হাসিনা বেগম, বিলকিস, জাফর সহ আরো অনেকে বলেন, হাসপাতালের আউটডোর চলাকালীন সময়ে ২০০ টাকা ফ্রি বিনিময়ে ডাক্তাররা রোগী দেখেন, কোন কারনে বিনামূল্যে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা রিপোর্ট দেখাতে হলে ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে যেতে হয়, যার জন্য দিতে হয় ফ্রি। এতে করে বিনামূল্যে সরকারি সেবা নিতে এসে টাকা না দিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার কোন সুযোগ থাকছে না।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনরা বলেন, হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার, ব্যবহার অযোগ্য টয়লেট সবচেয়ে বড ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসার রোগীর পাশাপাশি আমরা যারা সাথে এসেছি তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
আজকে দুপরের খাবরে ভাতের সাথে মুরগি দেয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে পাঙ্গাস মাছ। পরে জানলাম পাঙ্গাস মাছ দেওয়ার কোন নিয়ম নেই, দেওয়ার কথা ছিল রুই মাছ। তার মধ্যে মাছের টুকরোটি অনেক ছোট এবং পাতলা। আমরা এসব বিষয়ে দুদকে অবগত করেছিলাম।
এদিকে রোগীদের এমন নানান অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে এই প্রতিনিধি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টি সরে জমিনে পরিদর্শন করলে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই ব্যাঙ্গের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে ওঠা মান হীন ডায়গনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা রোগীদের। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় কমিশন বাণিজ্য কতিপয় দালাল শ্রেণীর উপদ্রব। যা থেকে পরিত্রাণ পেতে রোগী ও রোগী স্বজনদের নিরব প্রতিবাদ করছেন।
এসব বিষয়ে অভিযানকারী দুদক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেন জানান, রোগীদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া সকল তথ্যের প্রথমিক সত্যতা আমরা এই অভিযানে গিয়ে পেয়েছি। এমনকি তথ্য যাচাইয়ে আমরা নিজেরাই রোগী সেজে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ফি দিতে হয়েছে ২০০ টাকা। আবার দুজন চিকিৎসক কাগজে কলমে উপস্থিত থাকলেও বাস্তবে কর্মস্থলে পেয়েছি অনুপস্থিত। কাগজে কলমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তির রোগীদের দুপুরের খাবারে মুরগি দেবার কথা থাকলেও পেয়েছি পাঙ্গাস মাছ। যা ওজনে ১৮৬ গ্রাম দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে পেয়েছি ৮৮ গ্রাম। তবে কাগজে কলমে দেওয়ার কথা রুই মাছ। যা দিন হিসেবে খাবারে রীতিমতো পুকুর চুরির মতো অবস্থা। আমরা পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেের নানান অনিয়ম ও নার্সদের দুর্ব্যবহার সকল বিষয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডাঃ কেএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চর অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা অনেক সময় টাকা দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নিতে চায়, এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের কিছু লোক টাকার বিনিময়ে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ করে দেন। এছাড়াও খাবার এবং অব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সকল তথ্য আমি আমলে নিয়েছি। আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ দুদকের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তাদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা করব।
উল্লেখ্য হাইমচর উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ছাড়াও আলগি বাজার অবস্থিত এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে, প্রতিদিন আশে পাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, তাই এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির স্বাস্থ্য সেবায় ভঙ্গুরর্দশা কাটিয়ে দ্রুতই চিকিৎসা সেবার মান ফিরবে এমনটাই প্রত্যাশা সেবা গ্রহীতাদের।
Comments