কাজের ব্যস্ততার মাঝেই খাবার খেয়ে বিপদ ডাকছেন না তো?

দিনভর কাজের চাপ, মিটিং, এর মাঝেই অনেকেই খাবারটা সেরে ফেলেন ল্যাপটপের সামনে বসে, কখনও মেসেঞ্জারে রিপ্লাই দিতে দিতে। কিন্তু এই তাড়াহুড়ো করে খাওয়ার অভ্যাসই নীরবে ক্ষতি করছে আমাদের হজম ক্ষমতা ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য। পুষ্টিবিদ তানিয়া খান্না জানান, কাজের ফাঁকে তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়ার এমন অভ্যাস শুধু মানসিক চাপ নয়, হজমের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বর্তমান সময়ে কাজের সঙ্গে খাবার খাওয়ার অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে হজমে বিঘ্ন ঘটায় এবং গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা ও মলত্যাগের অনিয়ম তৈরি করে।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে পুষ্টিবিদ ও যোগ প্রশিক্ষক তানিয়া খান্না বলেন, আজকের দ্রুতগতির জীবনে আমরা প্রায়ই ফোন বা ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খাই। তবে খুব সাধারণ কিছু মনোযোগী পরিবর্তন আমাদের হজম ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, মনোযোগ দিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া, খাওয়ার সময় অন্য কাজে মন না দেয়া, কিংবা খাওয়ার আগে কয়েক সেকেন্ড থেমে থাকা এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো হজমশক্তি বাড়ায়, পেটের অস্বস্তি কমায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কাজের ফাঁকে খাওয়ার কারণে যেসব সমস্যা হতে পারে: পুষ্টিবিদ জানান, দিনের পর দিন কাজের চাপে চাপা পড়ে যেভাবে আমরা খাচ্ছি, তাতে পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো—
> অ্যাসিডিটি
> পেট ফাঁপা ও অস্বস্তি
> মলত্যাগের অনিয়ম
তবে ভালো খবর হলো, এর সমাধান কোনো ব্যয়বহুল ডায়েট বা ওষুধে নয়, বরং আমরা কীভাবে খাচ্ছি তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
সচেতনভাবে খাওয়ার সহজ উপায়: তানিয়া খান্না জানান, মনোযোগ দিয়ে খেলে শরীরের "প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেম" সক্রিয় হয়, যা হজমের জন্য উপকারী। নিচে এমন কিছু উপায় দেয়া হলো, যা কর্মঘণ্টার মধ্যেই সহজে চর্চা করা যায়—
স্ক্রিন বন্ধ রাখুন: খাওয়ার সময় মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। খাবারের দিকে পুরো মনোযোগ দিলে হজম ভালো হয় ও পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতিও ঠিকভাবে আসে।
প্রতিটি কামড় চিবিয়ে খান অন্তত ২২ বার: হজমের প্রক্রিয়া মুখ থেকেই শুরু হয়। খাবার ভালোভাবে চিবালে অন্ত্রে কম চাপ পড়ে।
খাওয়ার আগে কয়েকবার গভীর শ্বাস নিন: এটি শরীরকে 'রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট' বা বিশ্রাম ও হজমের অবস্থায় নিয়ে যায়, যা হজমে সহায়ক।
খাওয়ার সময় নির্ধারিত করুন: লাঞ্চ বা নাস্তার সময়টিকে ঠিক মিটিংয়ের মতো গুরুত্ব দিন।
পারফেকশন নয়, উপস্থিতি জরুরি: খাওয়ার সময় পুরোপুরি উপস্থিত থাকা, খাবারের স্বাদ ও গন্ধ উপভোগ করাই সচেতন খাওয়ার মূল কথা।
আমরা অনেকেই পুষ্টি বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য বলতে কঠিন ডায়েট, খাবার তালিকা বা ব্যায়ামের কথা ভাবি। তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন খুব ছোট ছোট অভ্যাস বদলেই হজমের বড় পরিবর্তন সম্ভব। খাওয়ার সময় যদি আপনি নিজেকে কিছুটা সময় দেন, মনোযোগ দিয়ে খান তাহলে হজমের সমস্যাসহ নানান সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
Comments