ইরানে ইসরাইলি হামলা বিস্তৃত হবে আঞ্চলিক যুদ্ধে?

ইসরাইলের হামলায় ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, দু'জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। হামলায় নিহত হয়েছেন আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড রেজিমেন্ট একটি বিশেষ বাহিনী যার কাজ দেশের পরমাণু অস্ত্র সম্ভারের নিরাপত্তা দেওয়া, দেশের অভ্যন্তরে ভিন্নমত কঠোরভাবে দমন করা এবং দেশের বাইরে টার্গেটেড হামলা পরিচালনা করা।
কে এই হোসেইন সালামি?
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ সালামি ১৯৬০ সালে গোলপায়েগানে জন্মগ্রহণ করেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় কলেজে পড়ার সময় তিনি এই বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৯ এর ২১ এপ্রিল মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফারির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগে তিনি পদে উন্নীত হন এবং ডেপুটি কমান্ডার হন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি তাকে নতুন কমান্ডার-ইন-চীফ নিযুক্ত করেন।
জেনারেল সালামি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি আইআরজিসি'র নেতৃত্বে ছিলেন যখন ইরান গত বছরের এপ্রিল এবং অক্টোবরে ইসরাইলে কয়েকশ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। সেটি ছিল ইসরাইলি ভূখণ্ডে ইরানের প্রথম সরাসরি হামলায়। গত জানুয়ারিতে তিনি আইআরজিসি-অনুমোদিত মিডিয়াতে একটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা পরিদর্শনে উপস্থিত হন যা এপ্রিল এবং অক্টোবরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের অভিযানের অংশ ছিল। ইরানের আধা-সরকারি মিডিয়া আউটলেট মেহর নিউজ জানিয়েছে, সাইটটি "নতুন বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র" তৈরি করছিল।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস মূলত একটি সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি যা দেশটির ইসলামি শাসন ব্যবস্থার প্রতি ভেতর ও বাইরে থেকে আসা যে কোনো হুমকিকে প্রতিরোধে কাজ করে। সেই বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ায় একদিকে ইরানের মনোবলে যেমন আঘাত লেগেছে, তেমনি দেশটি প্রতিশোধের পথও খুঁজছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সতর্ক করে বলেছে, ইরান এবার আগের চেয়ে 'ব্যাপক' পাল্টা হামলা চালাতে পারে। পরমাণু স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে ইসরাইল এখন সরাসরি ইরানের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মধ্যে প্রবেশ করেছে। কারণ এই হামলা শুধু প্রতীকী নয়, বরং ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ।
আন্তর্জাতিকত বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখন নিজেকে অস্তিত্বের হুমকির মুখে দেখছে এবং সে কারণেই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হতে পারে আগের চেয়ে অনেক বড়। ইসরাইলের সাম্প্রতিক আক্রমণ ইরানকে চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে, এবং একটি পাল্টা হামলার আশঙ্কা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই মুহূর্তে ইসরাইল-ইরান সংঘাত সীমিত পর্যায়ে নেই, বরং এটি দ্রুততর গতিতে একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।
Comments