বিশ্বকবির ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

বাংলাভাষা ও সাহিত্যের কালজয়ী রূপকার, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখের এই দিনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এ বছর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ'।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ (১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অনন্য সব সৃষ্টি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ও অসংখ্য গানের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের কাছে। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদাসুন্দরী দেবী এবং বাবা ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন আট বছর বয়সে। ১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও ওড়িশার জমিদারি তদারকি শুরু করেন। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘসময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে সপরিবারে চলে আসেন বীরভূমের বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য গদ্য সংকলন। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ নোবেল বিজয়ী এই সহিত্য প্রতিভাকে স্মরণ করবে তার অগণিত ভক্ত।
এ বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান কুষ্টিয়ার শিলাইদহে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগেও রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হবে। এবারের রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য-'রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ'। দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন সড়কদ্বীপ এবং সব জেলায় বিশ্বকবির ছবি, কবিতা, পরিচিতি ও চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশ্বকবির ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ও চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।
অন্যান্য জেলায় জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় রবীন্দ্র গবেষক বা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সুধীজনের সহযোগিতায় কমিটি গঠন করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করবে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনাসভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক দূতাবাসগুলোয় দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপন করা হবে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ৬০০ স্মরণিকা এবং ২০ হাজার পোস্টার মুদ্রণ করা হবে।
এদিকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফরহাদ সিদ্দিক এবং স্মারক বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কুষ্টিয়ার উপাচার্য ড. নকীব মোহাম্মাদ নসরুল্লাহ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান।
আলোচনাপর্ব শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই সমবেত নৃত্য 'আকাশ ভরা সূর্যতারা' পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। 'আনন্দধারা বহিছে ভুবনে' ও 'ভালোবেসে সখী' গান দুটি পরিবেশন করবেন সুমা রানী রায়। এরপর একক সংগীত 'আমি কোথায় পাবো তারে' পরিবেশন করবেন বুলবুল ইসলাম। আবারও একক সংগীত 'ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে' পরিবেশন করবেন সুমা রানী রায় এবং 'তুমি কেমন করে গান' পরিবেশন করবেন বুলবুল ইসলাম। এরপর দ্বৈত সংগীত 'বিশ্ব সাথে যোগে যেথায়' পরিবেশন করবেন সুমা রানী রায় ও বুলবুল ইসলাম। সবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করবেন সমবেত নৃত্য 'ঐ মহা মানব আসে'।
Comments