তেল ছাড়া খাবার খেলে আমাদের শরীরে যা ঘটে

সুস্থ থাকতে এখন অনেকেই তেল ছাড়া খাবার খান। আবার এমনও স্বাস্থ্য সচেতন অনেকে একদম তেল ছাড়া রান্নার দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রবণতায় প্রতিদিনের খাবারে কোনো ধরনের অতিরিক্ত তেল যোগ করা হয় না। যদিও তেল উচ্চ ক্যালরিযুক্ত উপাদান, তবে এটি আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে এবং ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে-এর মতো ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন শোষণে সাহায্য করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটানা দুই সপ্তাহ তেল ছাড়া খাবার খেলে শরীরে কী প্রভাব পড়ে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে পুষ্টিবিদ কণিকা মালহোত্রা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে সম্পূর্ণ তেল ছাড়া খাদ্য গ্রহণের ফলে হজম ও বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। তেলের অনুপস্থিতি শরীরে ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন শোষণে সমস্যা তৈরি করতে পারে, যার ফলে পুষ্টিহীনতা, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা পেট ফেঁপে থাকার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিপাকে প্রভাব: তেল বাদ দিলে সাময়িকভাবে ক্যালোরি গ্রহণ কমে, যার ফলে ওজন হ্রাস পেতে পারে। তবে এতে শরীরের হরমোন নিঃসরণ ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। ফলে বাড়তে পারে খিদে ও খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ।
ভিটামিন শোষণে সমস্যা: তেল ছাড়া শরীর ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন যথাযথভাবে শোষণ করতে পারে না। এই ভিটামিনগুলো ছোট অন্ত্রে মাইসেলের মাধ্যমে শোষিত হয়, যার জন্য ফ্যাট প্রয়োজন। তেল না থাকলে মাইসেল গঠনে সমস্যা হয়, ফলে ভিটামিনের জৈবপ্রাপ্যতা কমে যায়। যার ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হাড়ের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি শাকসবজি থেকে ক্যারোটিনয়েড জাতীয় উপাদানও শরীর ঠিকভাবে নিতে পারে না।
ত্বক, শক্তি ও মনের উপর প্রভাব
ত্বকের স্বাস্থ্য: তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের সুরক্ষা দেয় এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে। তেল ছাড়া খাওয়ার ফলে ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক এবং চুলকানিযুক্ত হয়ে উঠতে পারে।
শক্তির মাত্রা: চর্বি হলো এক ধরনের শক্তি উৎস। চর্বি না থাকলে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং কম স্ট্যামিনা অনুভব করতে পারেন, কারণ ফ্যাট ধীরে ধীরে শক্তি ছাড়ে যা দীর্ঘ সময় ধরে উদ্যম জোগায়।
মেজাজের উপর প্রভাব: চর্বির অভাবে মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার কাজ ব্যাহত হতে পারে, ফলে মেজাজ খারাপ হওয়া, রাগ বা খিটখিটে ভাব দেখা দিতে পারে। পুষ্টির ঘাটতির কারণে সার্বিক মনোবলেও প্রভাব পড়ে।
তেল ছাড়াও যেসব খাবারে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে: তেল বাদ দিলেও কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো থেকে আপনি প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাটি অ্যাসিড পেতে পারেন:
চর্বিযুক্ত মাছ: স্যামন, ম্যাকারেল, সারডিন, হেরিং ইত্যাদি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর।
বীজ: ফ্ল্যাক্সসিড ও চিয়া বীজে রয়েছে অ্যালফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড।
বাদাম: বিশেষ করে আখরোটে অ্যালফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড বেশি থাকে।
ফর্টিফায়েড খাবার: ওমেগা-৩ যুক্ত ডিম, দুধ বা প্লান্ট-বেসড মিল্ক জাতীয় খাবার বেছে নিন।
স্বল্প সময়ের জন্য তেল ছাড়া খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করলে ওজন কমতে পারে বা ডিটক্স অনুভব হতে পারে ঠিকই, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি শরীরের পুষ্টি, ত্বক, হরমোন ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সম্পূর্ণ তেল বাদ না দিয়ে বরং স্বাস্থ্যকর তেল বা পরিমাণমত তেল দিয়ে রান্না করাই ভালো বলছেন পুষ্টিবিদরা।
Comments