চিনির বিকল্প গুড় খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর?
আজকাল প্রায় সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। নিজেকে ফিট রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন অধিকাংশ মানুষ। খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন থেকে শুরু করে জীবন পরিচালনা, সব ক্ষেত্রে বাড়তি দৃষ্টি। এ কারণে অনেকেই অতিরিক্ত বা কাঁচা লবণ খাওয়া বাদ দিয়েছেন।
এদিকে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা হলে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। কারও কারও ধারণা, মিষ্টি খেলে সুগার হবে কিনা। আবার কারও ভয়, চিনি খেলে ওজন বেড়ে যাবে না তো? অর্থাৎ, মানুষ যে এখন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হয়েছেন, তারই প্রমাণ মিলে। এ অবস্থায় অনেকেই চায়ে চিনির পরিবর্তে গুড়ের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু চিনির বিকল্প হিসেবে গুড় কি আসলেই স্বাস্থ্য উপকারী?
স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ প্রদানকারী ওয়েবসাইট অনলি মাই হেলথ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গুড় ও চিনি দুটিই আখ থেকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তবে মানুষের বিশ্বাস, গুড় যত বেশি খাওয়াই হোক তাকে ক্ষতি নেই। প্রকৃত অর্থে গুড়ে কিছু ক্যালোরি থাকে। এদিকে চিনি ও গুড় দুটিই আখ থেকে তৈরি করা হলেও চিনি সাদা করতে এতে রাসায়নিক এবং সংরক্ষণের জন্য কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়। বিপরীতে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ। এ কারণে গুড়ের রং গাঢ় হয়।
সার্টিফাইড নিউটিশনিস্ট ও ইউটিউবার গৌরব তানেজা বলেন, গুড় আমাদের শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে। সর্দি-কাশির মতো সমস্যা থেকে দূরে রাখে। শরীরে আয়রনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যাদের রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা রয়েছে, তারা এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
গুড় খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিপরীতে চিনিতে ফ্যাটি ক্যালোরি থাকে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ক্যালোরির দিক থেকে চিনি ও গুড় দুটিতেই ক্যালোরি রয়েছে। আর দুটিই যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়, তাহলে আপনার স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও গুড় তেমন ক্ষতি করে না শরীরের। কারণ এটি রাসায়নিক মুক্ত। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে চিনির পরিবর্তে গুড় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
সঠিক পরিমাণে গুড় খাওয়া: গুড়ে উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেশিয়াম থাকায় এটি অন্ত্রের শক্তি বাড়িয়ে থাকে। প্রতি ১০ গ্রাম গুড়ে ১৬ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়, যা দৈনিক চাহিদার ৪ শতাংশ। অনেক বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন, একজন সুস্থ মানুষের দিনে ২৫ গ্রামের বেশি গুড় খাওয়া ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ গ্রামের মতো হলে ভালো হয়। আবার আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৫ গ্রাম পরিমাণ গুড় খাওয়া যেতে পারে।
তবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে গুড় খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে। তা না হলে অল্প পরিমাণ গুড় খাওয়ার ফলেও শরীরের জটিল অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। আবার গুড় কেনার আগেও সচেতন থাকতে হবে, কেননা গুড়েও ভেজাল থাকতে পারে।
অন্যান্য যেসব কারণে গুড় খাবেন: গুড় তৈরির প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার কারণে এটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখে। এ জন্য চিনির পরিবর্তে গুড় খাওয়া স্বাস্থ্যকর। গুড় অনাক্রম্যতা, আয়রন সামগ্রী, রক্তচাপসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যেখানে চিনি কেবলই নিছক মিষ্টি উপাদান।
এছাড়া চিনি ও গুড়ে দুটিতেই ক্যালোরি রয়েছে। এ জন্য আপনি যেটিই বেশি ব্যবহার করেন না কেন, আপনার স্বাস্থ্য বেড়ে যেতে পারে। তবে চিনির পরিবর্তে গুড় খেলে ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠবেন আপনি।
Comments