পুঁজিবাজারে ‘শিবলী কারসাজি’
অবশেষে জানা গেল, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার। সাথে আছে তার আরও ৮ সাবেক সহকর্মীও।
শেয়ারবাজারে লুটপাটে সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করার বিস্তর আভিযোগ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ১৭ মে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পুনর্নিয়োগ পেয়ে গত বছরের ১৬ মে তিনি আবার বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।
১৯৯৭ ও ২০১০ এর কেলেংকারির পর দেশের আর্থিক খাতের প্রাণকেন্দ্র পুঁজিবাজার আর সেভাবে উঠে দাঁড়াতে পারেনি। তবে একজন শিক্ষক-কে এই দায়িত্ব দেয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আশা ছিল তিনি লোভ লালসার বাইরে থেকে বাজারে নিয়ম আর শৃঙ্খলা ফিরাবেন। কিন্তু তা হয়নি।
২০২০ সালে দায়িত্ব নিয়ে দরকারি সব সংস্কার ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্রুত বাজার চাঙ্গা হওয়ার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছিলেন শিবলী। এরপরে বাজারে শেয়ারদরের কিছুটা উত্থানও হয়েছিল, তবে সেটা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ঢাকা এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক - ডিএসইএক্স ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০০ শতাংশের বেশি বেড়ে ৭ হাজার ৩০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। কিন্তু, বিনিয়োগকারীরা যখন জানতে পারলেন যে ছোট মূলধন সীমার খাতগুলোর অস্বাভাবিক উত্থানের পেছনে কাজ করছে শিবলীর সমর্থিত একটি চক্র – তখনই দর পতন শুরু হয়।
বাজার কারসাজির অপর নাম হয়ে উঠেছিল 'শিবলী কারসাজি'। শিবলী শুধু তার ঘনিষ্ঠ চক্রগুলোকেই নানান সুবিধা ও ছাড় দিতেন। ফলে যারা এর বাইরে তাদের বাজার প্রভাবিত করার ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। এ অবস্থায়, শিবলীর সাথে এসব চক্র পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা করে কাজ করছে এমন সন্দেহ আরও দানা বাঁধতে থাকে। বিদেশে বিভিন্ন রোড শো করে শিবলী ও তার সহযোগী চক্রের সদস্যরা ব্যাপক অর্থের অপচয় করেছেন। কিন্তু কাঙ্খিত কোনো বিনিয়োগ আসেনি।
অভিযোগ আছে, সেকেন্ডারি বাজারকে দুষ্টচক্রের একান্ত প্লে-গ্রাউন্ডে পরিণত করেছিলেন শিবলী রুবাইয়াত। শিবলী ঘনিষ্ঠ এই চক্রের প্রত্যেকে নজিরবিহীন ছাড় এবং দায়মুক্তি পেয়েছেন বাজারে। তার বিরুদ্ধের সবচেয়ে অভিযোগ ছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের স্বার্থেও কাজ করার। বেক্সিমকোর ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছাড়ার অনুমোদন তিনিই দেন। এরপরে আমার বন্ড এর মাধ্যমে আরও ১ হাজার কোটি টাকা তোলা হয় বাজার থেকে। এরপর এই বছরের শুরুতে আরও ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বন্ড জারিতে আংশিক সফলও হয় বেক্সিমকো।
তিনি অন্যায়ভাবে নিজেও ব্যবসা করেছেন বাজারে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে শেয়ার ব্যবসা করেছেন বেনামে। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। শেয়ার ব্যবসা করতে গিয়ে শিবলী রুবাইয়াত শেয়ার কারসাজির অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরোর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন ভলেও অভিযোগ আছে। সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবালকে একের পর এক বিতর্কিত সুবিধা দিয়েছেন অধ্যাপক শিবলী। এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের সঙ্গে দুবাইয়ে সিগমা ম্যানেজমেন্ট নামে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। ওই কোম্পানির পার্টনার শিবলীর বড় ছেলে যুহায়ের ইসলাম বলে জানা গেছে। আইপিও অনুমোদন, মন্দ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত এবং স্বার্থান্বেষী মহলকে নানা সুবিধা দিয়ে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন অধ্যাপক শিবলী।
Comments