সাইফের ওপর হামলায় ভুলে আটক হওয়া যুবকের জীবনে অশান্তি
কয়েকদিন আগেই বলিউড তারকা সাইফ আলী খানের ওপর মধ্যরাতে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসে মুম্বাই পুলিশ। তাৎক্ষণিক অভিযুক্তকে ধরতে উঠেপড়ে লাগে। বলিউড তারকার ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ তৎপরতা বাড়ালেও ভুল করে ফেলে। আর তাদের সেই ভুলে চাকরি হারানো ও বিয়ে ভাঙার ঘটনা ঘটেছে।
মুম্বাই পুলিশ ভুল করে কোলাবার বাসিন্দা আকাশ কৈলাশ কানোজিয়া নামের এক ৩১ বছরের যুবককে আটক করে। গত ১৭ জানুয়ারি জ্ঞানেশ্বর এক্সপ্রেসে মুম্বাই থেকে বিলাসপুর যাচ্ছিলেন ওই যুবক। এ সময় তাকে সাইফের ওপর হামলাকারী সন্দেহে আটক করা হয়। তারকার বাড়িতে হামলার ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আরপিএফকে সতর্কও করে মুম্বাই পুলিশ।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী আকাশ কৈলাশ জানিয়েছেন, আরপিএফ কর্মীরা তাকেই শুধু গ্রেপ্তার করেনি, তার ছবিসহ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে। যা টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করেছে। এ কারণে কনে পক্ষের পরিবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ বাতিল করেছে। আবার কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে।
মুম্বাইয়ে পশ্চিম রেলওয়েতে কর্মরত একটি ট্যুর সংস্থায় গাড়িচালকের চাকরি করতেন আকাশ কৈলাশ। গত ১৭ জানুয়ারি মুম্বাই পুলিশ থেকে ফোন করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোথায় আছেন তিনি। বাড়িতে আছেন বলে পুলিশকে জানালে ফোন কেটে যায়।
পরদিন ১৮ জানুয়ারি আকাশ কৈলাশ মুম্বাই থেকে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন ছত্তিশগড়ের বাবার বাড়ি নেহলায় তার অসুস্থ দাদির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য। মাঝপথে বিলাসপুরে ট্রেন বদলের কথা ছিল। দাদির সঙ্গে দেখা করার পর কনে পক্ষের লোকজনের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু এদিন সকাল ১০টার দিকে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্গ জংশনে পৌঁছালে হামলাকারী সন্দেহে তাকে আরপিএফ কর্মীরা আটক করে রায়পুর নিয়ে যায়। প্রায় বারো ঘণ্টা পর মুম্বাই পুলিশের একটি টিম সেখানে যায় এবং তাকে জানায়, অধিকতর তদন্তের জন্য পরদিন তাকে শহরে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
আকাশ কৈলাশ বলেন, আমি পুলিশকে বলেছিলাম যে সাইফের ওপর হামলার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাদেরকে আমার আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। তাদের আরও বলেছিলাম, তাদের সন্দেহ দূর করার জন্য আমার বাড়ির কাছের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে পারে। কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শুনেনি। বরং আমার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করে দাবি করে যে, আমিই নাকি হামলাকারী।
এরপর ১৮ জানুয়ারি রাতে পুলিশ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ নামে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে এবং দাবি করে যে, তিনি ডাকাতির উদ্দেশ্যে সাইফের বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন। আর পরদিন সকালে আকাশ কৈলাশকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ তাকে বলে যে, তিনি তার দাদির বাড়িতে যেতে পারেন।
আকাশ কৈলাশ বলেন, ছাড়া পাওয়ার পর যখন মায়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ে কথা বলি, তখন তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছিল। কারণ ততক্ষণে আমার ছবি সব নিউজ চ্যানেলে দেখানো হয়েছে। আমাকে দ্রুত বাড়িতে যেতে বলে মা। পরদিন আমার নিয়োগকর্তাকে ফোন করলে তিনি আমাকে কাজের জন্য রিপোর্ট করা বন্ধ করতে বলেন। তারা আমাকে জানায়, আমি আইনি ঝামেলায় জড়িয়েছি, আমার কারণে সমস্যায় পড়তে চান না তারা। বিষয়টি বোঝাতে চাইলেও আমার কথা শুনতে রাজি হননি।
এ যুবক আরও বলেন, এ সময় দাদির কাছ থেকে ফোন পাই। তিনি জানান, আমার ছবি সংবাদমাধ্যমে যাওয়ার পর হবু কনের পরিবার বিয়ে ভেঙে দিতে চাইছে। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তাতে আমি নিশ্চিত নই যে ভবিষ্যতে বিয়ে করতে পারব কিনা। এতদিন পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু চাকরি হারানোয় সব আটকে গেছে বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন আকাশ কৈলাশ।
এখন এ যুবকের দাবি, তাকে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে―এ ধরনের সব ছবি ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নেয়া হোক। তবে আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে নিজের জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ করার সামর্থ্য নেই তার।
Comments