যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প অধ্যায়ের শুরু
জো বাইডেন অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিয়ে আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আব্রাহাম লিঙ্কন যে বাইবেল হাতে শপথ নিয়েছিলেন, সেই প্রথা মেনে বাইবেলের ওপর হাত রেখেই আজ (সোমবার) আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন তিনি।
কিন্তু আবহওয়ার কারণে শপথ অনুষ্ঠান 'আউটডোরে' নয়, হবে 'ইন্ডোরে'। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, সোমবার শৈত্যপ্রবাহের শিকার হতে চলেছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে হতে পারে তুষারপাতও। তাই ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের উদ্যানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাচ্ছে না এবার।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে বসার প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন অবৈধ অভিবাসন, জলবায়ু নীতিমালা, বৈচিত্র্য নীতি, গোপন নথি সংক্রান্ত বিষয়সহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে।
ট্রাম্পের অন্যতম এজেন্ডা অবৈধ অভিবাস ঠেকানো এবং সে জন্য জাতীয় সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন এবং দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষায় সামরিক বাহিনী নিয়োগ দিতে পারেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এমন একটি দীর্ঘদিনের নীতি বাতিল করবেন, যার ফলে ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ চার্চ ও স্কুলেও অভিযান চালাতে পারবে। প্রথম মেয়াদের মতো এবারও তিনি "মেক্সিকোতে থাকো" নীতি আবার চালু করতে পারেন। এ নীতির অধীনে, মেক্সিকান নয় এরকম প্রায় প্রায় ৭০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে বিচারিক শুনানির জন্য মেক্সিকোতে পাঠানো হয়েছিল।
জন্মসূত্রের নাগরিকত্ব ব্যবস্তাও বিলোপ করবেন ট্রাম্প। ১৫০ বছর পুরোনো সাংবিধানিক এই অধিকারের ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তিনি এটি প্রথম দিনেই বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এবারের ট্রাম্পের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হতে চলেছে বিশ্ব বানিজ্য। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করবেন,যা আমেরিকার উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেবে। আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি প্রথম দিন থেকেই এসব শুল্ক কার্যকর করার জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব শুল্ক বিশ্বব্যাপী ভোক্তা পণ্যের দাম বাড়াবে এবং মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, কিছু দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছে।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান,দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ট্রাম্প সেগুলো বাতিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেন। ২০২১ সালে বাইডেন প্রথম দিনেই এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনেন। তবে তিনি আবারও এই আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন।
ট্রাম্পের আশ্বাসে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছে চীনা অ্যাপ টিকটক। গত ১৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ করা হয় টিকটক। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি দেখিয়ে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরই দেশজুড়ে অফলাইনে চলে যায় অ্যাপটি। মুছে ফেলা হয় গুগল এবং অ্যাপল স্টোর থেকেও। তবে, বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই দেশটিতে আবারও নিজেদের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে টিকটক কর্তৃপক্ষ। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া প্রতিশ্রুতির পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় তারা।