উল্লাপাড়ায় দেশি মাছের সংকটে ফাঁকা শুঁটকি চাতাল, দুশ্চিন্তায় চাষীরা
ঢাকা জার্নাল ডেস্ক: মো. ময়নুল হোসাইন, চলনবিল
প্রতি বছরই পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়ার শুঁটকি চাতালগুলোয়। প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় বাছাই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন শ্রমিকরা। ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত প্রতিদিন চলতে থাকে এ কর্মযজ্ঞ।
তবে এবার মৌসুম শুরু হলেও বিলে কাঙ্খিত পরিমাণ মাছ মিলছে না। এতে শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। দেশের মিঠা পানির মাছের সবচেয়ে বড় উৎস সিরাজগঞ্জের চলনবিল। বন্যার পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় শুঁটকির চাতালগুলোতে। বেলা ওঠার সাথে সাথে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় উল্লাপাড়ার শুটকি পল্লীতেও।
এ অঞ্চলে পুটি, টেংরা, বেলে, চিংড়ি, টাকি, খলিষা, শোল, বোয়াল, বাতাসি, চাপিলাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ এখানে শুঁটকি করে তা দেশ ও বিদেশে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা। তবে এবারে মৌসুম শুরুতে এখানকার বেশিরভাগ শুঁটকির চাতাল ফাঁকা রয়েছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিলাঞ্চলে বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের অবৈধ জাল ব্যবহার, অপরিকল্পিত পুকুর খননে পানি প্রবাহে বাধার কারণে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এবার মৌসুম শুরু হলেও বিলে কাঙ্খিত পরিমাণ মাছ মিলছে না। গত কয়েকদিন ধরে চাতাল একদম শুন্য পড়ে আছে। তাই শুটকি চাষীরা এবারে তাদের উৎপাদন সঠিক ভাবে করতে পারবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত মোহনপুর ইউনিয়ন,পাঙ্গাসী ইউনিয়ন,বাঙ্গালা ইউনিয়নে যেসব শুটকি ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের চাতাল গুলো অধিকাংশ ফাঁকা পড়ে আছে। মাছের অভাবে তারা শুটকি তৈরী করতে পাড়ছে না।
বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের শুটকি চাষী আব্দুর রহমান বলেন, এবছরে শুরুতেই একদিন মাছ পেয়েছিলাম তার পরে আর মাছ পাওয়া যায়নি। বিগত ১৫ দিন ধরে চাতাল একদম মাছ শুন্য ছিলো। তাই শুটকি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে গত ২ দিন হলো বাজারে আবার কিছু মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুঁটি মাছের সংখাই বেশি। এজন্য অল্প করে তা চাতালে শুকানো হচ্ছে। মাছ না পাওযার কারণ হিসেবে তিনি আরো বলেন, জৈষ্ঠ মাসে যখন পানি আসে তখন বিভিন্ন অবৈধ জাল দিয়ে মা মাছ গুলো ধরে ফেলা হয়। যাতে করে মা মাছ গুলো আর পোনা ছাড়তে পারে না এতে করে বিলে মাছের সংকট দেখা দেয়।
শুটকি শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, এসব শুটকি চাতালে কাজ করেন পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা। তবে পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হলেও নারী শ্রমিকের মজুরি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দেওয়া হয়। এ আয় দিয়েই তারা সারা বছর সংসার খরচ চালাতে পরিবারকে সহায়তা করেন। তবে মাছের সংকটে চাতালে কাজ নেই তাই পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে শ্রমিকেরা।
নারী শ্রমিক আছমা বেওয়া বলেন, অনেক বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছে। পরিবারে তেমন কাজ করার লোক নেই তাই বাধ্য হয়ে নিজেকেই কাজ করতে হয়। সেই ভোর বেলা থেকে মাছ পরিস্কার করা, মাছে লবন মেশানো থেকে সকল কাজই করতে হয়। পুরুষদের সমমানই আমরা কাজ করে থাকি। কিন্তু তাদের চেয়ে আমাদের মজুরি অনেক কম। বর্তমানে চাতালে মাছ না থাকায় কাজ নেই। তাই পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা আতাউর রহমান ঢাকা জার্নালকে বলেন, এ বছর বিলের পানি আগেভাগেই নেমে গেছে। তাই দেশি মাছ খুব একটা পাওয়া যায়নি। তবে এখনো খাল বিলে পানি রয়েছে। যখন এসব খাল বিল থেকে মাঠ ধরা হবে আশা করা যায় তখন পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে।