পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা:দেশজুড়ে ৭৮৮ জনের মৃত্যু

পেশোয়ারের খাইবার পাখতুনখওয়ার বিভিন্ন জেলায় টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৫২ জন। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত শুধু প্রদেশটিতেই বন্যা ও বৃষ্টিজনিত ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৯ জনে এবং আহত হয়েছেন ২৫১ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৩০৫ জন পুরুষ, ৫৫ জন নারী ও ৪৯ জন
ঝড়বৃষ্টিতে খাইবার পাখতুনখওয়ার ৫৭৮টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২,৯৫৪টি বাড়ি। শুধু ডেরা ইসমাইল খানে শনিবার রাতে ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে ৮ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন। লোয়ার দিরে ঘর ধসে তিন শিশুর মৃত্যু হয়, মানসেহরায় ও কোহিস্তানেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঝড়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভেঙে পড়ে, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে, দেয়াল ও ছাদ ধসে পড়ে যায়। হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
পাঞ্জাব প্রদেশে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে যাওয়ায় সরকার উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। ভারতের তরফ থেকে সতর্কবার্তায় জানানো হয়, জম্মুর তাওয়ি নদীতে "উচ্চ বন্যা" পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব নিম্নাঞ্চলগুলোতে পড়তে পারে।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, সিয়ালকোট, মারালা, খানকি, কাদিরাবাদসহ চেনাব অববাহিকায় পানির প্রবাহ বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে অনেক জায়গায়। ভেহারী, সাহেওয়াল, পাকপাট্টন, বাহাওলনগর, ওকারা জেলায় শত শত গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। অন্তত ২১ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তান জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। তীব্র বর্ষণ, খরা, তাপপ্রবাহ ও হিমবাহ গলে নতুন হ্রদ তৈরির কারণে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। অথচ পাকিস্তানের বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে অবদান ১ শতাংশেরও কম। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ১,৭০০ জনের মৃত্যু ও প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয়। চলতি বছরের জুনেই অন্তত ৭৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
পাকিস্তানের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হলেও, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বাজেট কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯.৭ মিলিয়ন ডলারে। সাবেক জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রহমান এ সিদ্ধান্তকে ভুল বার্তা বলে সমালোচনা করেছেন।
Comments