দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বীমা দাবি যেভাবে পূরণ করা হয়

গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র এবং দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রবেশদ্বার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে সর্বনাশা আগুন। ছাই হয়ে যায় আমদানি রপ্তানির জন্য সংরক্ষিত পণ্য। ক্ষতির পরিমাণ বলা হচ্ছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।
এখন প্রশ্ন আসছে ক্ষতিপূরণের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বা সরকার বিষয়টি বিবেচনা করছে। প্রসঙ্গ আসছে বীমা দাবি পূরণেরও। তবে মেরিন ইন্স্যুরেন্স দাবি করার ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া কি সেটা একটু জেনে নেয়া যেতে পারে।
আমদানি রপ্তানিকারকরা যে বীমাচুক্তি করেন, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি বলে একটি বিষয় আছে, যেখানে নানা ক্লজ আছে।
বাহক, রক্ষণকারী(Bailee) বা অন্য তৃতীয় পক্ষের দায়বদ্ধতা -
বীমাগ্রহীতা (Assured) এবং তাদের প্রতিনিধি বা এজেন্টদের দায়িত্ব হলো — সব ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেওয়া, যা ক্ষতি প্রতিরোধ বা কমানোর জন্য যুক্তিযুক্ত হয় এবং বাহক, রক্ষণকারী বা অন্যান্য তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে সকল আইনি অধিকার সংরক্ষিত থাকে।
বিশেষভাবে, বীমাগ্রহীতা বা তাদের এজেন্টদের করণীয়ঃ
১. তাৎক্ষণিক দাবি করা — যদি কোনো প্যাকেট হারিয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে বাহক, বন্দর কর্তৃপক্ষ বা অন্যান্য রক্ষণকারীর কাছে দাবি জানাতে হবে।
২. জরিপ (Survey) আবেদন করা — যদি পণ্য নামানোর সময় কোনো ক্ষতি বা ত্রুটি চোখে পড়ে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বাহকের প্রতিনিধিকে জানিয়ে ডকে জরিপের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্ষতির দাবি উত্থাপন করতে হবে।
৩. সন্দেহজনক পণ্য গ্রহণে সতর্কতা — কোনো অবস্থাতেই লিখিত প্রতিবাদ ছাড়া এমন পণ্যের রসিদ দেওয়া যাবে না, যা সন্দেহজনক বা ক্ষতিগ্রস্ত বলে মনে হয়।
৪. তিন দিনের মধ্যে লিখিত নোটিশ — ডেলিভারির সময় যদি ক্ষতি দেখা যায়, তাহলে ডেলিভারির তিন দিনের মধ্যে বাহক বা রক্ষণকারীকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
৫. জরিপের ব্যবস্থা করা — প্রয়োজনে জরিপের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
নোট: পণ্যগ্রহীতা বা তাদের এজেন্টদের সংশ্লিষ্ট বন্দরের নিয়ম ও বিধিবিধান সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকা উচিত।
জরিপ ও দাবি নিষ্পত্তি (Survey and Claim Settlement)
১. কোনো ক্ষতি বা লোকসান ঘটলে, যা বীমার দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে:
কোম্পানিকে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে এবং অনুমোদিত জরিপকারীর প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে হবে।
২. যেকোনো দাবি নিষ্পত্তির জন্য কোম্পানির অফিসে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে, যা পলিসিতে উল্লেখ আছে।
দাবির নথিপত্র (Documentation of Claims)
বীমার আওতায় করা যেকোনো দাবি দ্রুত জমা দিতে হবে এবং নিচের নথিগুলো সংযুক্ত করতে হবে—
১. মূল বীমা পলিসি বা সার্টিফিকেট।
২. বাণিজ্যিক চালান (Invoice)–এর মূল বা অনুলিপি, যার সঙ্গে পণ্যের বিবরণ ও ওজন উল্লেখ থাকবে।
৩. বিল অব লেডিং বা অন্যান্য পরিবহন চুক্তি।
৪. জরিপ
৫. চূড়ান্ত গন্তব্যে পণ্যের ল্যান্ডিং অ্যাকাউন্ট ও ওজনের নোট।
৬. বাহক বা অন্য পক্ষের সঙ্গে ক্ষতির দায়-দায়িত্ব সংক্রান্ত পত্রালাপের কপি। (ফটোকপি থাকলে সেটিও সংযুক্ত করতে হবে।)
আন্ডাররাইটারদের নোটিশ (Notice to the Underwriters)
বীমাগ্রহীতা যখনই কোনো ঘটনার ব্যাপারে অবগত হন, যা এই বীমার আওতায় আসে, তখনই আন্ডাররাইটারদের দ্রুত জানাতে হবে। এই বীমার আওতায় দাবি করার অধিকার নির্ভর করবে এই নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণের ওপর।
উপরের নিয়মগুলো না মানলে এই বীমার আওতায় দাবি বাতিল বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
Comments