ছোট বাজেটের লক্ষ্য বড়

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে শনিবার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আর এ জন্য কিছু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধি,জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে নজর থাকবে বলেও জানা গেছে। সরকারের বড় চিন্তা ছিল অর্থের সংস্থান নিয়ে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার ঋণ ছাড়ের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর আগামী অর্থবছরের বাজেটে টাকার সংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে গেছে।
সমস্যা তৈরি হয়েছে আইএমএফের শর্ত। এই শর্ত পালন করতে গিয়ে, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়ায়,নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। একই সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙ্গে দেয়ায় আসছে অর্থ বছরের রাজস্ব আহরণও সমস্যায় পড়তে পারে বলে শঙ্কা আছে।
গ্যাস ও বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি সীমিত রাখতে হবে সরকারকে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ভর্তুকি বাবদ ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কারণে এ দুটি খাতের বকেয়া ভর্তুকি দায় প্রায় পুরোটাই মেটানো সম্ভব হবে। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ভর্তুকিতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। চলতি অর্থবছরে এ দুটি খাতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বাবদ ভর্তুকির পরিমাণও কমছে।
সরকার চায় বিনিয়োগবান্ধব বাজেট করতে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাজেটে নতুন নতুন উদ্যোগ যুক্ত করা হচ্ছে। এ জন্য ব্যবসার পরিবেশ সহজীকরণ এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ঝূঁকি মোকাবিলায় বাজেটে ব্যবসা ও বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন-কানুন সহজীকরণের ঘোষণা থাকতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ,খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত,সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি বেগবান করতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা,অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন,দারিদ্র্য বিমোচন,নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার,পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সার্বিকভাবে আর্থসামাজিকভাবে বৈষম্য কমানোর যে তাড়না থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিল,তা পূরণের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে।
আগামী বাজেটের আকার চলতি বাজেটের তুলনায় কমানো হচ্ছে,যা দেশের স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম। মূলত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ কমিয়ে বাজেটের আকার ছোট করা হচ্ছে। এবারের মোট বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা,যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২.৪০ লাখ কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এডিপিতে বরাদ্দ ২.৬৫ লাখ কোটি টাকা থেকে কমে ২.৩০ লাখ কোটি টাকা হতে পারে।
বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়বে। এ খাতে বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫.৫০ লাখ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫.০৭ লাখ কোটি টাকা।
Comments