ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষর শীর্ষ ঋণ খেলাপি সুরুজ মিয়া কি আইনের উর্ধ্বে

কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ঋণখেলাপিরা আইনের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তাহলে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে, আপনারা ধরছেন না কেন? যারা বড় বড় ঋণখেলাপি তারা কি বিচারের ঊর্ধ্বে থাকবে? যারা অর্থশালী তারা কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে? দুদক রাঘব-বোয়ালদের নয়, শুধু চুনোপুঁটিদের ধরতে ব্যস্ত আছে।
এমনি একজন রাঘব বোয়াল ,দেশের শীর্ষ ঋণ খেলাপি ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষর সুরুজ মিয়ার ঋণ মওকুফের ফন্দি ফিকির এর ঘটনায় এক এলাহী ঘটনা ঘটে গেছে,বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে, সুরুজ মিয়ার ৪৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফ নিয়ে ঝামেলার জেরে পদত্যাগে বাধ্য হলেন উক্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। পর্ষদ সভায় অসৌজন্যমূলক আচারণের পর পদত্যাগ করেছেন তিনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের পর্ষদ ভেঙে নতুন এ পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঘটনার সুত্রপাত, সুরুজ মিয়া স্পিনিং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৮৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি।এই ঋণের বিপরীতে সম্প্রতি ৪৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফের অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। মওকুফ কার্যকরের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়া এর আগে সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিলের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এমডির আপত্তির পরও মহসিন মিয়া ও ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের বিশেষ আগ্রহে সুদ মওকুফ অনুমোদন হয়।সুরুজ মিয়া স্পিনিংয়ের সুদ মওকুফের ফাইল বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত ছাড় করিয়ে আনার জন্য এমডির ওপর চাপাচাপি শুরু করেন পর্ষদের দুই সদস্য। এমডি তাতে রাজি না হওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের সভায় তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচারণ করা হয়। অনাপত্তি আনতে না পালে দু-একদিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয়। পদত্যাগ না করলে অপসারণ করা হবে বলে জানান চেয়ারম্যান। এর পরদিনই তিনি পদত্যাগ করেছেন। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক উক্ত ব্যাংকের কর্মরত অনেকেই বলছে বিগত ফ্যাসিস সরকারের আমলে এই সুরুজ মিয়া নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হিসেবে খ্যাত শামীম ওসমান ও মন্ত্রী এমপিদের নাম বলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে নিজের ইচ্ছায় যা ইচ্ছা তাই করতেন, ফলে উক্ত ব্যাংকের কর্মরত কর্মচারীরা পর্যন্ত তার কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ ছিল ,শোনা যাচ্ছে সুরুজ মিয়া নাকি অন্যান্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছে ,যাহা ৬০০ কোটি টাকা মতো ঋণ হবে।বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান এবং নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়ার মোবইলে কয়েক দফা ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকার সুরুজ মিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুরুজ মিয়া ওরফে বিড়ি সুরুজের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্পদের বিবরণীতে তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় মামলাটি দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) মো. তালেবুর রহমান মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল ,জানা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। প্রাথমিক তদন্তে নেমে সম্পত্তির বিবরণী চায় দুদক। এই বিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন করেন সুরুজ মিয়া। পরে তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
এই বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) মো. তালেবুর রহমানের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
সুরুজ মিয়া নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুরের চাঁনপুর এলাকার মৃত আফিস উদ্দিন প্রধানের ছেলে। তিনি সুরুজ মিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। থাকেন রাজধানীর টিকাটুলীর প্যারামাউন্ট কর্নকর্ড-৯ এর একটি ফ্ল্যাটে। তার ব্যবসায়ীক কার্যালয় মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সবই নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, একসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দরের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাধারণ বিড়ি বিক্রেতা থেকে বর্তমানে হাজার কোটি টাকার মালিক সুরুজ মিয়া। তার বিরুদ্ধে বিগত ফ্যাসিস সরকারের প্রভাবশালী নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমানের সেল্টারে অন্যের জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। মদনপুর বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশের লোকজন থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন তার বাহিনীর মাধ্যমে,বন্দর থানার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে চানপুর এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের পাশেই শত শত বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুরুজ মিয়া গ্রুপ। সেখানে রয়েছে সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক অয়েল মিলস, টাইটানিক সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক ও মাস্টার্ড অয়েল মিলস। এছাড়া তার রয়েছে বিশাল জমির ব্যবসা ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অবস্থিত মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এই ভূমি অফিসকে নিজের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছেন সুরুজ মিয়া। অন্যের জমি নিজের দখলে নেওয়াই তার কাজ। তেমনি এক ভুক্তভোগী মো. রিয়াজ উদ্দিন পাটোয়ারী জমি কিনলেও দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে নিজের জমিতে যেতে পারেন না সুরুজ মিয়ার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে । একজন ভুক্তভোগী বলেন এই ধরনের ঘটনা শতা শত রয়েছে এই সুরুজ মিয়ার ক্যাডার বাহিনী বিরুদ্ধে,তিনি বলেন গত বছর ৫ আগষ্টের পর ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যান্য দোষর পালেও সুরুজ মিয়ার ক্যাডার বাহিনী এখনও বীরদর্পে চাঁদাবাজি দখলবাজি করে যাচ্ছে, তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অধিষ্ঠি। শীর্ষ ঋণ খেলাপি সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর আরো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ করে বলেন, এই শীর্ষ ঋণ খেলাপি সুরুজ মিয়া দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ মদনপুরের একতা মার্কেট কমিটি দখলে নিয়ে রেখেছিলেন সেখানকার তার বাহিনী। যা নিয়ে পুরোই ইউনিয়ন জুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নিয়মিতই চলতো নানা আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে কিছু দিন আগে বিএনপির নেতা হিরণকে স্বৈরাচারের দোষর সুরুজ মিয়ার ক্যাডাররা মারধরের অভিযোগ উঠেছে, হিরণকে মারধর করছেন সবুজ গেঞ্জি ও র্শাট পড়া কয়েকজনের একটি গ্রুপ তারা নাকি সুরুজ মিয়ার লোক। তারা এলোপ্যাথারী কিল, ঘুষি, লাথিসহ অস্রাব্য ভাষায় হিরণকে গালিগালাজ করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে হিরণের গায়ের পাঞ্জাবি ছিড়ে যায়। এরপর আদালতপাড়ায় থাকা কয়েকজন মুহুরী ও লোকজনের সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পান।
Comments