১০ মাসেও বাংলা বই পায়নি শিক্ষার্থীরা, দায় এড়াচ্ছে কর্তৃপক্ষ

চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দশ মাস শেষ। সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা। অথচ সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত মূল পাঠ্যবই 'বাংলা' এখনও হাতে পায়নি। বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে মোট ৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাঁরা বই না পাওয়ার পরও অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। বার্ষিক পরীক্ষা দোরগোড়ায় চলে আসায় বই না পেয়ে চরম হতাশ শিক্ষার্থীরা। আর বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে সপ্তম শ্রেণীর পাঠদান কক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমরা কেউই বাংলা বই এখনো পাইনি। বছরের শুরু থেকেই ম্যাডাম এবং স্যারকে বারবার বলার পরেও কোনো কাজ হয়নি। স্যাররা আমাদের কথায় কান দেন না। বই ছাড়াই আমরা অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছি। এখন বই ছাড়াই বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চন্দ্র শেখর সরকার জানান, সপ্তম শ্রেণীর শুধু বাংলা বইটিই বাকি ছিল। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বইটি দেওয়ার কথা থাকলেও তারা 'দেই-দিচ্ছি' বলে কালক্ষেপণ করেছে। বাকি সকল শ্রেণীর সকল বই আমরা বিতরণ করেছি।
তবে প্রধান শিক্ষকের এই দাবিকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমি এইমাত্র শুনলাম। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো অভিযোগ বা চাহিদার কথা জানায়নি। তাদের কথাগুলো দায়সারা এবং অপরিপক্ক। জানুয়ারিতেই সারা উপজেলায় বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের স্কুলেই বইয়ের গুদাম। সবাই বই পেলে তারা কেন পাবে না? প্রয়োজন হলে আমরা বই ফটোকপি করে ছাপিয়ে দিতাম।
এই দায়িত্বহীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নতুনপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, মাস খানেক পরেই বার্ষিক পরীক্ষা, অথচ শিক্ষার্থীরা এখনো বই পায়নি। এটি সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বহীনতা ও জ্ঞানহীনতার পরিচায়ক। এর দায় স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা শিক্ষা অফিস কেউই এড়াতে পারে না।
তবে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, ১০ মাসেও কেন শিক্ষার্থীরা বই পায়নি সেই বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেবো। আগামীকালই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো। একই সাথে এই বিষয়ে কারও কোনো গাফিলতি আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।
Comments