পেঁয়াজ সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি; ফরিদপুরে কৃষকদের প্রশিক্ষণ

পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা এবং পেঁয়াজের উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ফরিদপুরে কৃষকদের নিয়ে একটি দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 'বাংলাদেশের পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকায় পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব প্রশমনে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভিযোজন প্রকল্প' এর আওতায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। রবিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুরের উপপরিচালকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই কর্মসূচি চলে।
এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, বিশেষ করে এয়ার ফ্লো মেশিন নামক একটি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে। এতে জেলার তিনটি উপজেলার ৬০ জন কৃষক অংশ নেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন দেশীয় ১০টি কৃষি যন্ত্রপাতি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি এয়ার ফ্লো মেশিনগুলো প্রদর্শন করে এবং এগুলোর কার্যকারিতা তুলে ধরে।
প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন, অর্থ ও অ্যাপার্ট সার্ভিসেস), ড. মোহাম্মদ কাজী মজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা। প্রশিক্ষণটি সঞ্চালনা করেন পেঁয়াজ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মাহফুজুর রহমান।
প্রকল্প পরিচালক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও, উপযুক্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে একদিকে যেমন বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকে না এবং কৃষকরাও তাদের ন্যায্য দাম পান না। তিনি এয়ার ফ্লো মেশিনকে এই সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে উল্লেখ করেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব, যা দেশের পেঁয়াজ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনবে এবং ভবিষ্যতে পেঁয়াজ রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবে।
ড. মাহফুজুর রহমান আরও জানান যে, এই প্রকল্পের অধীনে ফরিদপুরসহ দেশের ১৬টি জেলার ১০৭টি উপজেলায় ৩,৭০০টি এয়ার ফ্লো মেশিন বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সরাসরি মেশিন না দিয়ে, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৭,০০০ টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কোম্পানির মেশিন কিনতে পারেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের কৃষক ও ভোক্তাদের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা তৈরি হবে।
প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রকল্প পরিচালক ড. মাহফুজুর রহমান প্রদর্শিত ১০টি এয়ার ফ্লো মেশিনের গুণগত মান পরীক্ষা করে কৃষকদের সামনে ব্যবহারের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
Comments