নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাত্রীকালীন বৈঠক

নীলফামারী পৌর শহরের ৫, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিয়মিত রাত্রীকালীন গোপন বৈঠক করছে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে শহরের উপজেলা হেলিপ্যাড মাঠ, কুন্দপুকুর ইউনিয়নের কুন্দপুকুরপাড়ে, ইটাখোলা ইউনিয়নের সাইফন ও সিংদই পদ্মবিল এলাকা, গোড়গ্রাম ইউনিয়নের নীলসাগর এবং সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন আবাসিক হোটেল।
শহরের ৫নং ওয়ার্ডের আরাজি কানিয়ালখাতা মজর মুন্সিপাড়া, আরাজি কানিয়াল খাতা শাহ পাড়া, শান্তিনগর এলাকা, ছিট ইটাখোলা, কলেজ পাড়া আংশিক, কেন্দ্রীয় কবরস্থান মোড় এলাকা, আরাজি কানিয়াল খাতা আব্দুল্লাহ মিয়ার পাড়া, হাসপাতাল সড়ক হাজীপাড়া, পশ্চিম বাবু পাড়া, সওদাগর পাড়া, নিউ বাবুপাড়া, মাছুয়াপাড়া আংশিকা শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শাহীপাড়া, জুম্মাপাড়া, ফুড অফিসপাড়া, নিউ ওয়াবদা মোড় নেল্লাটারী, সদর উপজেলা পশ্চিমপাড়া, বাবুপাড়া আংশিক, নীলফামারী সৈয়দপুর/উপজেলা সড়ক এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উকিলপাড়া, থানাপাড়া, নতুন বাজার আংশিক, ডাকবাংলা সড়ক, সার্কিট হাউজ পাড়া, নীল প্রতিভা পাড়া, হঠাৎ পাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগপন্থী নেতাকর্মীদের নিয়মিত এ ধরনের সমাবেশে দেখা যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে অনেকের নামে একাধিক মামলা এবং মামলা নেই এরকম কর্মীদেরও দেখা গেছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নীলফামারী শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, আর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র দেওয়ান কামাল আহম্মেদের বসবাস। আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। দীর্ঘ আত্মগোপনের পর তিনি ঢাকার একটি বাসা থেকে আটক হন এবং বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। অপরদিকে দেওয়ান কামাল আহম্মেদ ও অ্যাডভোকেট মমতাজুল হকের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা যায়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ মাহমুদ সম্প্রতি রংপুরের লালকুটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। এখন জেল হাজতে রয়েছে।
এ চার প্রভাবশালী নেতার অনুপস্থিতিতে এবং তাদের সন্মান অক্ষুন্ন রাখতে ৫, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।
শাহীপাড়া ও নতুনবাজার-এই দুই ওয়ার্ড শহরের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। শাহীপাড়ার পাশেই শহরের জিরোপয়েন্ট, সোনালী ব্যাংক, জেলা পোস্ট অফিস কার্যালয়, মহিলা কলেজ, ছমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস, পাবলিক লাইব্রেরী, সাধারণ গ্রন্থাগার এবং নতুন বাজারের সামনে রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজকোর্ট, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সদর থানা, এলজিইডি ভবন, জেলা পরিষদ ও খামারবাড়িসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর রয়েছে। ফলে এ এলাকায় যে কোনো নাশকতার আশঙ্কা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ সমর্থিত সাঁত সাংবাদিক বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, আওয়ামীলীগ মতাদর্শের ক্লিনিক ও প্যাথলজি, বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে সেই অর্থ তাদের পরিবার ও গোপন বৈঠক আয়োজনে ব্যয় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৫নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পলাতক রয়েছে এবং যারা জামিনে রয়েছে তাদের ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। তারাই একত্রিত হয়তো বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে। ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সাবেক সভাপতি শাকিল আলী জানান, সাংবাদিকদের কাছে আগেভাগেই অনেক সংবাদ থাকে। আমরা সজাগ রয়েছি। ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জামান জানান, মহল্লার বিভিন্ন চায়ের দোকানে আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রায় সময় একত্রিত হতে দেখা যায়। তবে তারা কি বিষয়ে আলাপ আলোচনা করছে জানার চেষ্টা চলছে।
জেলা বিএনপির আহবায়ক মীর সেলিম ফারুক জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসে সে। দলীয় নেতাকর্মীদের অবগত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের নজরদারী বুদ্ধির দাবী জানিয়েছে।
নীলফামারীর পুলিশ সুপার এ এফ এম তারিক হোসেন খান মুঠোফোনে জানান, বিষয়গুলো আমার জানা নেই। আমি রংপুরের একটি মিটিং এ আছি।
Comments