'আদিবাসী নারীরা দ্বৈত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন'

ভূমি হারিয়ে আদিবাসীরা জীবিকা সংকটে পড়ছেন, আর নারীরা দ্বৈত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সমতল ভূমির আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আইএলও কনভেনশন ১৬৯ অনুসমর্থনের দাবি জানিয়ে নওগাঁ শহরে অনুষ্ঠিত হলো "আদিবাসী নারী নেতৃত্বাধীন জীবিকা ও ভূমি সুরক্ষা" শীর্ষক কর্মশালা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) নওগাঁ শহরের বইপট্টি আয়োজন কমিউনিটি সেন্টারে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাদাবন সংঘ।
বাদাবন সংঘের ভলেন্টিয়ার ইয়াংজি'র সঞ্চালনায় কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারিহা জেসমিন, অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাই ও মেরিনা হাসদা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আদিবাসী নেত্রী প্রবীর চক্রবর্তী, অবলম্বনের হৈমন্তী সরকার, পামদোর নরেশ ওরাও এবং আসুসের কামাল হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের সমতলভূমি ও পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত ভূমি হারাচ্ছেন। পূর্বপুরুষদের জমি হারিয়ে তারা কৃষিকাজ ও ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে সরে গিয়ে জীবিকা সংকটে পড়েছেন। এর ফলে বিশেষ করে আদিবাসী নারীরা দ্বৈত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন- নারী হিসেবে এক ধরনের বঞ্চনা এবং আদিবাসী পরিচয়ের কারণে আরেক ধরনের সামাজিক বৈষম্য।
তারা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫৭টি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজারে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সমতলভূমিতে বাস করে। তবে ভূমি মালিকানা নিয়ে বিরোধ, দখল এবং আইনি জটিলতার কারণে তাদের বড় অংশ জীবিকার উৎস হারিয়ে ফেলছেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, আদিবাসী নারীরা সামাজিক বর্জন, সরকারি খাতের সেবা থেকে বঞ্চনা, ন্যায়বিচারে সীমিত প্রবেশাধিকার, মজুরি বৈষম্য, জমি উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব, বাল্যবিবাহ ও ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার মতো বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
তারা আদিবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান। সমতলভূমির আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন। শিক্ষা ও বাজারে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। জমির কাগজপত্র ও আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুসমর্থন। সমাজে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলার দাবী জানান।
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, "ভূমি সুরক্ষা ছাড়া আদিবাসীদের টিকে থাকা সম্ভব নয়। আর নারী নেতৃত্ব বিকাশ না ঘটলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না।"
দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনীতে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকারের নীতি নির্ধারকরা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আদিবাসী নারীসহ সমগ্র সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব হবে।
Comments