প্রবাস থেকে খালি হাতে ফিরতে দেশে সমন্বিত কৃষি খামার করে ভাগ্য বদল রেজাউলের

দীর্ঘদিন প্রবাস খেটে দেশে ফিরে অনেকেই নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য কৃষি ক্ষেত্রকে বেছে নিচ্ছেন এবং সফল হচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, এবং অন্যান্য ফসল চাষ করে তারা আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন। এমনই বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের আইচা গ্রামের রেজাউল করিম মৃধা এখন স্বাবলম্বী। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আত্মনির্ভরশীলতার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এখানে। কৃষি বিভাগ বলছে রেজাউলের মত স্মার্ট কৃষিতে তরুণ যুব সমাজকে আগ্রহী করে তুলছেন তারা।
কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল করিম মৃধা বলেন, ২০১৭ সালে ভাগ্য বদলের আশায় প্রবাসে পাড়ি জমায় তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল। করোনা মহামারী প্রবাসী রেজাউলের জীবনে বয়েআনে স্থবিরতা। খালি হাতে ফিরতে হয় দেশে। শিক্ষিত হয়েও দেশে কর্মসংস্থান খুঁজে না পাওয়ায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন সমন্বিত কৃষি খামার। শুরুতে এ কাজ তাকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও বর্তমানে ভালো আয়ের মাধ্যম হাওয়ায় খুশি রেজাউল। তার পাশাপাশি খামারে আরো ১০-১২ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তার খামারে কাজ করা শ্রমিকদেরও ভালো আয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
রেজাউল আরও বলেন, তার মত কৃষি উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে কৃষি বিভাগ আর্থিক সহায়তা সহ সার বীজ দিয়ে সহায়তা করলে আরো বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হবে। যাতে করে বেকার সমস্যা দূর হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং উদ্যোগী হতেও সহায়তা করবে।
একজন কৃষক যখন তার পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দেয় ঠিক সেই সময়ই কৃষি বিভাগ তাকে সহায়তা করে। এর আগে একজন উদ্যোক্তাকে নানা ধরনের হয়রানি শিকার হতে হয়। জমি না পাওয়া, অর্থায়ন, সঠিক পরামর্শ এবং ভালো বীজের সংকট। এগুলোর দিকে কৃষি বিভাগ নজর দিলে আনাচে কানাচে পড়ে থাকা জমিতে চাষাবাদ করে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারে।
এদিকে রেজাউলের মত স্মার্ট কৃষিতে তরুণ যুব সমাজকে আগ্রহী করে তুলছেন কৃষি বিভাগ। কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক বলেন, কৃষকদের জমিতে ঘের করে উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদে তারা নানা ধরনের পরামর্শ দেন। এছাড়া সরাসরি এবং অনলাইনেও পরামর্শ দেন দেয়ার কথা জানান তিনি।
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কৃষক কে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে স্মার্ট কৃষকের রূপান্তর করার চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম ভৌমিক বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা ইতিমধ্যে অনেক নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তারা কৃষিকে গুছিয়ে একটি শিল্পে রুপ দেয়ার চেষ্টা করছে। এক জায়গাতেই মাছ তার উপরে সবজি পাশে নানা ধরনের পেঁপে সহ ফসলের আবাদ করছেন। যার কারনে এক ইঞ্চি জমিয় পরিত্যক্ত থাকছে না। এর ফলে ভালো আয় এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষিকে আধুনিক রুপ দেয়ায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর এসব কৃষকদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদে অধিক লাভবানও হচ্ছেন।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাম্মাৎ মরিয়ম বলেন, যেখানেই পতিত জমি আছে এটাকেই যেন কৃষক কাজে লাগায়। আধুনিক প্রযুক্তিতে যেন চাষ করেন। কৃষক রেজাউলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন এখানে এই কৃষক প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগিয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও ব্যবহার করেছেন। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সরকারি সহায়তায় কৃষকরা লাভবান হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। খাদ্য ঘাটতি ও পুষ্টিগুণ চাহিদা মেটাতে আধুনিক ফসল উৎপাদনের বিকল্প নেই। বর্তমানে কৃষকরা অনেকেই আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করছেন। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের পাশে রয়েছি। তাদের যেকোনো সহায়তা এবং পরামর্শ দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিয়োজিত রয়েছে।
১০ একর জমিতে চলতি মৌসুমে ৬ একরে মাছ চাষ এবং বাকি জমিতে লাউ, মরিচ, পেঁপে, করলা, বেগুন ও ধুন্দুল আবাদ করেছেন রেজাউল।
Comments