সাদাপাথর লুটঃ এক ভয়ংকর পরিবেশ ডাকাতি

জায়গাটির নাম হয়তো সাদাপাথরই থেকে যাবে, কিন্তু পাথর আর থাকবে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার সিলেটে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ 'সাদাপাথর' এলাকা এখন মরুভূমির মতো রূপ নিচ্ছে। যে সাদাপাথর এলাকায় প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটকের পদচারণা ঘটে কেবল সৌন্দর্যের টানে, পাথর মাড়িয়ে পড়া স্বচ্ছ জলরাশি দেখে সুখ পান পর্যটকরা, অবাধ লুটপাটে মনোমুগ্ধকর সেই 'সাদাপাথর' এলাকা এখন বিবর্ণ।
সরকারের উদাসীনতায় পাথরখেকোরা নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে লুটপাট। উপরের পাথর তো সব খেয়েছেই, এখন মাটিখুঁড়ে বের করে নেওয়া হচ্ছে পাথর। দিনে দুপুরে পরিবেশের এমন ডাকাতি বাংলাদেশ আগে কখনও দেখেনি।
বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যিনি নিজেও বৃহত্তর সিলেটের মানুষ, এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন,'আগের চার বছর পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছিলাম, এখন আমি উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না'।

এই ডাকাতি বন্ধ করা তার মন্ত্রণালয়েরই কাজ, কিন্তু তিনি পারেন নি। তার কথায় স্পষ্ট যে, আগে সরকারের আমলে বাইরে থেকে পরিবেশ নিয়ে যা করতে পেরেছেন, এখন সরকারের অংশ হিসেবে এসে মন্ত্রীত্ব পেয়েও তিনি তা পারলেন না।
রাষ্ট্রকে অনেক সময় বধির সেজে থাকতে হয়। বাংলাদেশে হয়তো এখন সেই সময় চলছে। বলা হচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধররা এর সাথে জড়িত। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারাদেশের মতো এই সাদাপাথরেও হামলে পড়েছে দুর্বৃত্তরা। পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, 'পাথর ডাকাতিতে সর্বদলীয় ঐক্য আছে, পরিবেশ রক্ষায় নেই'।
শুধু সাদাপথর এলাকা নয়, সারাদেশেই পরিবেশ ডাকাতি হয়, ধ্বংস হয় এবং প্রশাসন পরাজিত হয় পেশি শক্তির কাছে। পরিবেশ সংকটের কারণের একটি হলো বহু ধরনের মুনাফা ও রোজগার। ভোলাগঞ্জের এই সাদাপাথর এলাকায় গত এক বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে। এলাকার লোক বলছেন এর বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
সরকারি নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক মদদে এই লুটপাট চলছে। পরিবেশ আইনের মুখে ঝাড়ু মেরে ডাকাতি হলো, কিন্তু উপদেষ্টা শুধু হতাশা প্রকাশ করেই কর্তব্য শেষ করলেন। এর কারণে জল-বায়ু-মাটি সব দূষিত হবে, পর্যটক কমে যাবে। কিছু হাঁকডাক ছাড়া কিছুই করা হলো না। পরিবেশবিদ্যা বা পরিবেশ আইন নয়, স্বার্থ-ক্ষমতার জটিল সমীকরণই শেষ কথা বলবে সাদাপথরের বেলায়?
Comments