আখাউড়ায় কল্লা শহীদ (র.) ওরশে যোগ দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভক্তদের যাত্রা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের খড়মপুরস্থ শাহ্পীর কল্লা শহীদ (র.) মাজারের সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক ওরশ মোবারকে যোগ দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভক্ত-অনুরাগীদের ভিড় দেখা গেছে। রোববার (১০ আগস্ট) ভোর থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ আখাউড়ায় ছুটে আসছেন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায় , ওরস চলাকালীন আখাউড়া রেলস্টেশনগামী প্রায় প্রতিটি ট্রেনের ছাদে গাদাগাদি করে যাত্রী যাতায়াত করছে। অনেকেই ভেতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে, ইঞ্জিনের সামনে কিংবা বগির মাঝের ফাঁকা স্থানে বসে আসছেন। ভ্রমণটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ভক্তদের উচ্ছ্বাস ও ভক্তিভাব তাদের নিরাপত্তার চেয়ে অংশগ্রহণকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছরই ওরশ উপলক্ষে একই দৃশ্য দেখা গেলেও যাত্রীদের নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা রোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ভক্তদের ভিড় যতই হোক না কেন, মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে রেলওয়ে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান।
ওরশ উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় জিকির, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন থাকবে। ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে হবে মূল দোয়া মাহফিল। এছাড়া মাজার সংলগ্ন খেলার মাঠে বসেছে বড় মেলা, যেখানে বাঁশ-বেতের তৈরি সামগ্রী, কাঠের জিনিসপত্র, কসমেটিকস, খেলনা ও প্লাস্টিক পণ্যের দোকান রয়েছে।
নরসিংদী থেকে তিতাস কমিউনিটি ট্রেনে আসা সিদ্দিক নামের এক ভক্ত জানান,ভেতরে বসার জায়গা পাইনি, তাই ছাদে আসতে হয়েছে। ঝুঁকি আছে জানি, কিন্তু কল্লা শহীদ (র.)-এর ওরশে আসা আমার ভাগ্যের বিষয়।
মাজার শরীফ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম খাদেম মিন্টু বলেন, পবিত্র ওরশ মোবারক সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশ-বিদেশের সকল ভক্ত-অনুরাগীকে এই মহতী আয়োজনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নূর নবী জানান,ওরশ উপলক্ষে প্রতিদিনই আখাউড়া অভিমুখী ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ থাকছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। তবে ভক্তরা যেন ছাদে না উঠে ভেতরে নিরাপদে যাতায়াত করেন, সেই বিষয়ে আমরা মাইকিংসহ নিয়মিত অনুরোধ জানাচ্ছি।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমিউদ্দিন বলেন, ওরশে আগত ভক্ত-অনুরাগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন এবং মাজার এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি এস.এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী চাপ থাকায় অনেকেই ট্রেনের ছাদে যাতায়াতের চেষ্টা করছেন। আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ছাদে ওঠা রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট খরমপুর মাজারসংলগ্ন রেলসেতুর পাশে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় চার ভক্তের মৃত্যু হয়। সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেসের ধাক্কায় এবং প্রাণ বাঁচাতে তিতাস নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
Comments