নিথর দেহ ফিরল বাঙালহালিয়ায়, শোকে স্তব্ধ রাজস্থলী

স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে রাঙামাটির প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদ রাজস্থলী থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। ভর্তি হয়েছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কিন্তু নির্মম এক দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় সেই স্বপ্ন। প্রকৌশলী হয়ে বীরের বেশে ফেরা হলো না; ফিরতে হলো নিথর দেহ হয়ে।
গত সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হন কলেজটির অনেক শিক্ষার্থী। তাঁদেরই একজন, রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার কলেজপাড়ার বাসিন্দা উসাইমং মারমা ও তেজিপ্রু মারমার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে উক্য চিং মারমা।
দুর্ঘটনার পর তাঁকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। টানা চিকিৎসার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মাত্র ১৩ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উক্য চিং মারমার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি পৌঁছায় তাঁর নিজ গ্রাম রাজস্থলীর বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের কলেজ এলাকায়। এ সময় এলাকাবাসীর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন শত শত মানুষ। সবাই যেন এক প্রশ্নেই স্তব্ধ—"এমন একটি শিশু কেন?"
উক্য চিং এর দাদু বলনে, সামনে ঢাকায় গিয়ে নাতিকে দেখে আসার আশা ছিল কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না।
উক্য চিং এর বাবা উসাইমং মারমা সাংবাদিকদের বলেন, "আমার ছেলে কখনো অবাধ্য ছিল না। ও ছিল খুব মেধাবী। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখত। ওর প্রিয় খাবার ছিল বিরিয়ানি।আগামী মাসের ১৫ তারিখে ঢাকায় যাবো বলে কথা দিয়েছিলাম—যা চাইবে সব কিনে দেব। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে ওর নিথর মরদেহ নিয়ে ফিরতে হলো। বাবা হয়ে কিছুই করতে পারলাম না।" বাবা উসাইমং মারমা আরো বলেন, আমার ছেলেটা ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাজেডির মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছে। বিগত দেড় বছর আগেও তার চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে মেডিকেলে ছিলাম প্রায় দেড়-দুই মাস।
এদিকে,ছেলের শোক সইতে না পেরে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন মা তেজিপ্রু মারমা। বারবার ছেলের নাম ধরে কাঁদতে কাঁদতে বারান্দায় লুটিয়ে পড়েন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার বিকেল ৩ টায় (২৩ জুলাই) ধর্মীয় আচার শেষে পারিবারিক শ্মশানে উক্য চিং এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো রাজস্থলী উপজেলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, প্রতিবেশীদের ঘরে, আত্মীয়দের মুখে—সর্বত্রই চলছে একটাই আলোচনা, "এই অসময়ে এমন মেধাবী একটি প্রাণ ঝরে গেল—এ কেমন নির্মমতা!"
Comments