ছয় মাসে ২৪ কোটি টাকার ভারতীয় মাদক ও চোরাচালান পন্য জব্দ করেছে বিজিবি

বিগত ৬ মাসে সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ২৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় মাদক ও পন্য জব্দ করেছে।
পহেলা জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের দেয়া তথ্যে ৫৮ ব্যাটালিয়নের উপ অধিনায়ক মেজর আবু হানিফ মোঃ সিহানুক গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান প্রতিরোধ বিজিবি'র একটি অন্যতম কাজ। মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা এবং চুয়াডাংগা জেলার জীবননগর ও দামুড়হুদা (১.৫ কিঃ মিঃ) উপজেলার সর্বমোট ১০৪.৫ কিঃ মিঃ সীমান্ত প্রহরার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) কর্তৃক দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিগত পহেলা জানুয়ারি থেকে অদ্যাবধি অভিযান পরিচালনা করে এ সাফল্য অর্জন করেছে।
এই সময়ে সর্বমোট ৭৯২০ বোতল মদ, ৯৫১৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৬৮.২৬৩ কেজি গাঁজা, ৪৫৮০৬ পিস ইয়াবা, ৫.১১১ কেজি কোকেন, ৬.৪০৫ কেজি হেরোইন, ২৩৫১০ পিস ভায়াগ্রা/ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ৫০৬৪৫ পিস ক্যান্সার প্রতিরোধকসহ বিভিন্ন প্রকার ঔষধ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কসমেটিকস, পোশাক আইটেম, সার, কীটনাশক, ভিওআইপি মেশিন, সানগ্লাস, আতশবাজি এবং আরও বিভিন্ন প্রকারের ভারতীয় মালামাল আটক করা হয়। যার সর্বমোট সিজার মূল্য ২৪,১৩,৪১,৪৪৬/- (চব্বিশ কোটি তেরো লক্ষ একচল্লিশ হাজার চারশত ছেচল্লিশ) টাকা।
মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) কর্তৃক গত ১৭ মার্চ ৭২৮.৯৬ গ্রাম, ৭ মে ৩৪৯.৩৩ গ্রাম, ২৯ মে ১ কেজি ১৭৭.৭১ গ্রাম, ২২ জুন ১ কেজি ১৬৬.২০ গ্রাম, ১৮ জুলাি ২৩২ গ্রামসহ সর্বমোট ৩ কেজি ৬৫৪.১৬ গ্রাম স্বর্ণ আটক করা হয় যার সিজার মূল্য ৪,৯৪,৫০,৫০২/- (চার কোটি চুরানব্বই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পাঁচশত দুই) টাকা।
এছাড়াও অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গমনকালে ১১৩৮ জন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আগমনকালে ৯৭৯ জন ধুর আটক করা হয়। উল্লেখিত সময়ে ১৮ জন ভারতীয় নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আগমন এবং বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাগমনের সময় আটক করা হয়। এ সময়ে ৩৩ জন সহায়তাকারী/দালাল আটক করা হয় যাদের মধ্যে শংকর অধিকারী (৩৯) নামক ১ জন ভারতীয় মানবপাচারকারী রয়েছে। যাকে গত ১ মে বাঘাডাংগা বিওপি'র টহলদল কর্তৃক আটক করা হয়।
এ সময়কালে ২ টি বিদেশী পিস্তল, ৪টি দেশী পিস্তল (One Shooter Gun) এবং ১৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
চলতি বছরের ঈদ উল আযহার সময় মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) এর দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোন গরু চোরাচালান হতে দেয়া হয়নি। এছাড়াও ঈদের পরে কোরবানীর চামড়া পাচারের ব্যাপারে বিজিবি'র টহল অত্যন্ত সতর্ক ছিল। ফলে ঈদুল আযহার পরে কোনো চামড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হয়নি।
যৌথ টাস্ক ফোর্সের অধীনে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) সর্বমোট ৯ টি টাস্ক ফোর্স অপারেশনে অংশগহণ করে যেখানে অবৈধ কারেন্ট জাল, চায়না দোয়ারী জাল, ভারতীয় মদ, ভারতীয় শাড়ী, ভারতীয় শাল, ভারতীয় থ্রি-পিচ সহ সর্বমোট ৯০,৮৮,৬১৫/- (নব্বই লক্ষ আটাশি হাজার ছয়শত পনেরো) টাকার মালামাল জব্দ এবং ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ২,৬০,০০০/- (দুই লক্ষ ষাট হাজার) টাকা জরিমানা করা হয়। গত ২৫ মে এবং ৩০ মে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী ৫২ জন বাংলাদেশী নাগরিককে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়। পরবর্তীতে বিএসএফ এর সাথে কার্যকরী যোগাযোগ, সমন্বয় এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রেক্ষিতে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী ১৮৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে বিএসএফ পুশ-ইন না করে শান্তিপূর্ণভাবে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবি'র নিকট হস্তান্তর করে।
মহেশপুর ব্যাটালিয়ন ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সকল ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধ এবং মানব পাচার বন্ধে মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি)'র প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
Comments