সাবেক চসিক মেয়রের রহস্যঘেরা দখলকৃত ভবন: নেই সিডিএ'র অনুমোদন
দায়সারা ভাব, ভবনের মালিকানার কাগজপত্রও নেই। ভবন নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেই কোন অনুমোদন, সঙ্গে নেই কোনো নকশাও। কিন্তু ৬ তলার একটি ভবন দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ ২৬ বছর। নিয়মিত ভাড়া তুলে আসছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবার। বিগত অনেক বছর এভাবেই চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্র খ্যাত চকবাজার গুলজার এলাকার পিছনে চট্টেশ্বরী রোডের 'মেয়র বিল্ডিং' নামে পরিচিত 'ডা: হারুনুর রশীদ চৌধুরী ভিলা' দখলে রেখেছে। ভবনটির মালিকানা ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে সাবেক মেয়র রেজাউলের এমন কাজে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দখল করা ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে ১২টি পরিবার, সেখানে আছে হামদর্দ নামে একটা দোকান যা আবাসিক ভবনের আওতায় পড়ে না। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে অবৈধ এ ভবনটি কার এবং এ ব্যাপারে সিডিএ নির্লিপ্ত কেনো?
অভিযোগ আছে, ২০০৮ সালের পর থেকে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তখন চসিকের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ কারণে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভবনটি নিজেদের পারিবারিক বলে দাবি করে ভাড়া আদায় করে আসছে। গায়ের জোর ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজের দখলে রেখেছেন ভবনটি। ভবন নিয়ে মালিকানার কাগজ না থাকলেও তারা দেদারসে ভাড়া আদায় করে চলেছে গত ১৮ বছর ধরে। সাবেক মেয়রের পারিবারিক সম্পত্তি দাবি করা হলেও সিডিএর কাছে মালিকানার কাগজপত্র এবং ভবন নির্মাণের অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে নাই। তাছাড়া গত সরকারের সময়ে ক্ষমতার দাপটে এই ভবন নিয়ে লুকোচুরি করেছে সিডিএ। এখনও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছেন সিডিএর দায়িত্বশীলরা।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দল এবং মেয়রের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভবনটি দখলে রেখেছে মেয়রের পরিবার। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর থেকে সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পলাতক। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চসিকের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটস্থ বাড়িতে দফায় দফায় ভাংচুর ও লুটপাট করেছে দূর্বৃত্তরা। এখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আবারও আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই ভবনের কয়েকজন মালিক থাকার কথা বললেও সাবেক মেয়রের ভাই নজরুল করিম চৌধুরী কখনো নিজে এবং কখনো অন্য কারও মাধ্যমে ভাড়াগুলো নিয়মিত আদায় করেন বলে দাবি করেছেন ভবনের দারোয়ান। এভাবে ভবনের দোকান-আবাসনের ভাড়ার টাকা যায় সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরীর পকেটে।
এই ভবনের দারোয়ান আলমগীর বলেন, রেজাউল পালাইছে আমাদের টাকা পয়সা মেরে। তার ভাষ্যমতে, ভবনটির ভাড়ার টাকা সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর লোক এসে নিয়ে যেতেন। সরকার পতনের পর তিনি পলাতক। বর্তমানে এই ভবনের ভাড়া মেয়রের ভাই নজরুল করিম চৌধুরী ও সুমন নামের একজন নিয়ে যান। এ সময় তাকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি আর বিস্তারিত বলতে অপরাগতা জানান।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)'র অথোরাইজড অফিসার প্রকৌশলী তানজির বলেন, সাবেক মেয়র রেজাউলের একটা ভবন বিষয়ে মৌখিক একটা অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের লোক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও এই ভবনের কোন ধরনের কাগজপত্র অনুমোদনের কিছুই দেখাতে পারেননি কেউ। সিডিএর কাছে ভবন অনুমোদনের কাগজ আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই ভবনটি অনেক পুরনো তাই কীভাবে এটার অনুমোদন হবে? এবং অনুমোদন ছিল কিনা সেটাও নিশ্চিত না। তবে বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
সিডিএ'র মাঠ কর্মকর্তা বিধান বড়ুয়া বলেন, এক সপ্তাহ আগে চকবাজারের হারুনুর রশীদ ভবনে গিয়েছিলাম। সেখানে কেউই কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তবে মালিকপক্ষ কাগজগুলো পুড়ে যাওয়ার কথা বললেও ভবনের মালিকানা, সিডিএ প্ল্যানের কোন কপি দিতে পারেননি।
সাবেক মেয়রের ভাই নজরুল করিম চৌধুরী বলেন, ১৯৫৬ সালে তাদের বাবা জায়গাটা কিনে সন্তানদের নামে আমমোক্তারনামা করেন। এটি আমাদের পারিবারিক ভবন। তবে ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে একটা আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর বর্তমানে এটা কয়েকজনে মিলে কিনে নিয়ে তারাই ভাড়া আদায় করেন। কিন্তু কোন কোম্পানি বা বর্তমানে কয়জনের মালিকানায় ভবনটি আছে, তবে কারা আছে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সদস্য ও পেশাজীবী নেতা সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি ঢাকা জার্নালকে বলেন, ভবনের মালিক যেই হউক, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অনুমোদন নিতে হবে। এরপর মধ্যে আলোচিত এবং পরিচিত কারো ভবন হলে সবকিছু নীরবেই ঠিক রাখতে হয়। এই বিষয়টি আমার জানা নেই। এটি আগামী বোর্ড মিটিং এ তুলব এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে তদন্তও হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তিনি।