ইমরান খান কি বেঁচে আছেন? নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে?
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে কেউ দেখা করতে পারছেন না। কারাগারের অভ্যন্তরে তিনি কেমন আছেন, সে তথ্যও অজানা। এ পরিস্থিতিতে হঠাৎ তাকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় ও আফগান সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো তাতে ঘি ঢালে।
বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খানের মৃত্যুর গুজবের মধ্যে আদিয়ালা কারাগারের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানে তার তিন বোনকে পিটিয়েছে পুলিশ। পিটিআইয়ের এমন অভিযোগে বিক্ষোভ নতুন মাত্রা পেয়েছে। সঙ্গে বাড়ছে ইমরানের খানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ। আর তথ্যের অপর্যাপ্ততায় গুজব বেড়েই চলেছে।
জানা গেছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব ছড়ালে আদিয়ালা কারাগারের সামনে তার তিন বোন বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে সমর্থকরাও যোগ দেন। কিন্তু পুলিশ সহযোগিতার বদলে তাদের নির্মমভাবে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ইমরান খানের বোন নরিন খান, আলিমা খান ও উজমা খান দাবি করেছেন, ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ায় পুলিশ তাদের এবং পিটিআই সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।
ইমরান খান ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি। তার বোনদের অভিযোগ, গত তিন সপ্তাহেও তারা ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পাননি। এজন্য তারা এই সপ্তাহে কারাগারের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিলে পুলিশ আকস্মিকভাবে লাঠিপেটা শুরু করে।
পিটিআইয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ইমরান খানের বোন ও সমর্থকরা শান্তিপূর্ণভাবে বসে থাকা অবস্থায় পুলিশ হঠাৎ তাদের ওপর হামলে পড়ে। দলটি ঘটনার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে।
'চুল ধরে টেনে রাস্তায় ফেলা হয়'
পাঞ্জাব পুলিশের আইজিপি উসমান আনোয়ারকে পাঠানো এক চিঠিতে নরিন বলেন, তাদের ওপর নির্মম ও পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, 'আমরা তার (ইমরান খানের) স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছিলাম। কোনো রাস্তা বন্ধ করিনি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করিনি, আইন ভঙ্গ করিনি। কিন্তু হঠাৎ এলাকা অন্ধকার করে দেওয়া হয়। স্ট্রিটলাইট বন্ধ করে পুলিশের নির্মম হামলা শুরু হয়।
৭১ বছর বয়সী নরিন জানান, 'আমার চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলে রাস্তা দিয়ে টেনে নেওয়া হয়। এতে আমি আঘাত পেয়েছি।'
তিনি জানান, সেখানে উপস্থিত অন্যান্য নারীদেরও থাপ্পড় ও টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
নরিন আরও বলেন, 'গত তিন বছর ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার বলপ্রয়োগের যে ধারাবাহিকতা চলছে, এটি তারই অংশ।'
বোনদের দাবি, পিটিআই চিফের সঙ্গে সাক্ষাতের ন্যায়সংগত অনুরোধকে অপরাধ হিসেবে দেখিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। তারা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
'সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় রাখা হয়েছে'
পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইমরান খানকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাকে অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি বই, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং আইনজীবীদের সঙ্গেও দেখা করার অনুমতি সীমিত করা হয়েছে।
আইনজীবী খালিদ ইউসুফ চৌধুরী বলেন, 'এখানে আইনের কোনো নিয়ম নেই। জঙ্গলের আইন চলছে, যেখানে শুধু শাসকেরই অধিকার থাকে।'
এমনকি খাইবার-পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোয়েল আফ্রিদির সাতবার চেষ্টা করলেও তাকে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পিটিআইয়ের অভিযোগ, জেল কর্তৃপক্ষকে একজন সেনা কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
Comments