ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছয় মাসে সোয়া ২ লাখ টাকা বেড়েছে
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে বিতরণ করা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত মার্চেও এই হার ছিল ২৪ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান বলছে, গত প্রায় এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক ঋণ অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে উন্মোচিত হওয়ায় খেলাপি ঋণের এই ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঋণ শ্রেণিকরণ বা ক্লাসিফিকেশন নীতিমালা কঠোর করার কারণেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১২ সালের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা পুনর্বহাল করেছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে এটি কার্যকর হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই ওই ঋণকে খেলাপি বা বকেয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর মানে হলো, এখন থেকে কোনো ঋণগ্রহীতা তিন মাস কিস্তি পরিশোধ না করলেই তিনি খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন। আগে কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ মাস পর কোনো ঋণকে খেলাপি করা হতো। নীতিমালার এই পরিবর্তনের ফলে খেলাপি ঋণের হিসাবে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে।
এদিকে, খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতিও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায়।
Comments