কড়াইল বস্তি যেন এক মৃত্যুপুরী:শত শত ঘর পুড়ে ছাই, খোলা আকাশের নিচে হাজারো মানুষ
গতকাল রাতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পুড়েছে রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তি। এতে ছাই হয়ে গেছে শত শত ঘর, শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন হাজারো মানুষ। ভোরের আলো ফুটতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে গত রাতের আগুনের ক্ষত। রাজধানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকা যেন এক মৃত্যুপুরী। ধ্বংসস্তূপ থেকে তখনো বেরোচ্ছে ধোঁয়া, বাতাসে পোড়া গন্ধ। ইটের গাঁথুনি আর টিনশেডের দু-তিনতলা অস্থায়ী ঘরগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। সর্বনাশা আগুনে সর্বস্ব খুইয়ে সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নিঃস্ব বাসিন্দারা।
কী করবেন, কোথায় যাবেন, বুঝে উঠতে পারছেন কেউ। সাজানো সংসার হারানোর শোকে আচ্ছন্ন তারা।
এরমধ্যেই অনেককে দেখা গেল ছাই-ভস্ম হাতড়াতে, মূল্যবান কোনো কিছু পাওয়ার আশায়। কাউকে দেখা গেল উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়াতে।
একজন রেখা বেগম। ২ বছরের ছেলেকে নিয়ে এদিক-ওদিক করছিলেন। জিজ্ঞেস করলে বলেন, 'আমার ঘর পুইড়া গেছে। পোলারে নিয়া যামু কই, কিছুই জানি না!' রেখা বাসা-বাড়িতে কাজ করতেন। বস্তির ছোট ঘরটাই তার একমাত্র সম্বল ছিল বলে জানান।
রেখার মতো সুমি বেগমও কড়াইল বস্তির রাস্তায় ঘুরছিলেন। বলেন, 'আমগর পাশাপাশিই ঘর আছিল। সব পুইড়া শ্যাষ। এহন কই বসব, কই শোব?' রিকশাচালক স্বামীকে এখনও খুঁজে পাননি বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া বিভাগের পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আগুনে কড়াইল বস্তির প্রায় ৫০০-৬০০ ঘর পুড়ে গেছে। এছাড়া, ১ হাজার ৫০০ ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল-সংখ্যক ঘর পুড়ে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এ ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডে যেসব পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের দুঃখ-কষ্ট আমাদের সকলের বেদনার। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।'
তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
Comments