দুর্বল বিমা কোম্পানিগুলোকে একীভূতকরণের ভাবনা
এবার বীমা খাতেও আসছে একীভূকরণের প্রসঙ্গ। ব্যাংক খাতের সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এবার বিমা খাতেও বড় ধরনের সংস্কারের পথে হাঁটছে নীতি নির্ধারকরা। নতুন সংস্কার রেসিপি অনুযায়ী, অচল বা দুর্বল বিমা কোম্পানিগুলোকে একীভূকরণ (মার্জার) বা লিকুইডেশনের মুখে পড়তে হতে পারে।
সূত্র জানায়, বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ- 'ইনসিউরার রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫'-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এটি ব্যাংক খাতে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার মতোই বীমা খাতে ব্যাপক সংস্কারের পথ তৈরি করবে- যেমনটি করা হয়েছে পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূকরণের মাধ্যমে।
আইডিআরএ ৮২টি জীবন ও অ-জীবন বিমা কোম্পানির কার্যক্রম তদারকি করে। সংস্থাটি শিল্পের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করেছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দিয়েছে।
আইডিআরএ গত ৫ নভেম্বর অধ্যাদেশটি জমা দিয়েছে। অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে, আইডিআরএ সমস্যাগ্রস্ত বিমা কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ, বোর্ড ভেঙে দেওয়া এবং টেকসই পলিসি বা সম্পদ নতুন 'ব্রিজ কোম্পানি'-তে স্থানান্তরের ক্ষমতা পাবে।
বলা হচ্ছে, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য – বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং বিমা খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার করা। এছাড়া অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা সম্পদ পুনরুদ্ধারের ক্ষমতাও আইডিআরএ পাবে।
নতুন আইন বাস্তবায়নের জন্য একটি বিশেষ রেজল্যুশন সেল গঠন করা হবে। এই সেলের কাজ ত্বরান্বিত করতে বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে যেখানে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেবে, যেমন - বিশ্বব্যাংকের আইডিএ, এডিবি, আইবিআরডি এবং আইসিডিবি।
প্রস্তাবিত কাঠামোর আওতায় কোনো বিমা কোম্পানিকে ম্যানেজমেন্ট পুনর্গঠন, একীভূকরণ বা লিকুইডেশন - যে কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। লক্ষ্য হলো ব্যাংক খাতের মতোই বিমা খাতকে শক্তিশালী ও সুশাসিত করা।
অধ্যাদেশের খসড়া মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাংক রেজল্যুশন মডেল অনুসারে তৈরি, যা আইডিআরএকে বিস্তৃত ক্ষমতা দেবে - দুর্বল কোম্পানিতে হস্তক্ষেপ, তাদের সম্পদ ও দায় স্থানান্তর, বা নতুন ব্রিজ বিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পলিসি হোল্ডারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।
এই পদক্ষেপটি বাংলাদেশের বিমা খাতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। কারণ, অনেক জীবন বিমা কোম্পানি ম্যাচিউরিটি ক্লেইম পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে জনআস্থা হারিয়েছে। নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলো তুলনামূলক শক্তিশালী হলেও, উভয় খাতই এই নতুন অধ্যাদেশের আওতায় আসবে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ইনস্যুরেন্স পেনিট্রেশনের হার সবচেয়ে কম, যার পেছনে রয়েছে দাবি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব, অস্বচ্ছতা এবং দুর্বল করপোরেট গভর্নেন্স। দীর্ঘদিনের অনিয়ম, অপব্যবহার এবং দায় পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে সাধারণ মানুষ বিমার প্রতি আস্থা হারিয়েছে, যদিও স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা ও জলবায়ু ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিমা খাতে আইডিআরএর তত্ত্বাবধানে ৪৬টি অ-জীবন এবং ৩৬টি জীবন বিমা কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
Comments