মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাজারে ভাঙচুর আগুন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামে চারটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় একটি মাজার আঙিনায় থাকা তিনটি বসতঘর ভাঙচুর করার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত চারটি মাজার হচ্ছে আসাদপুর গ্রামের আলেক শাহের বাড়িতে অবস্থিত তাঁর বাবা কফিল উদ্দিন শাহের মাজার, একই গ্রামের আবদু শাহের মাজার, কালাই (কানু) শাহের মাজার ও হাওয়ালি শাহের মাজার। হাওয়া বেগম নামের এক নারী 'হাওয়ালি শাহ' মাজার পরিচালনা করেন।
তবে সেখানে কোনো ব্যক্তি সমাহিত নেই। ওই বাড়িতে মাজারসদৃশ স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে আলাদা চারটি মাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় একটি মোটরবাইকসহ আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
খবর পেয়ে হোমনা থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ সুপার (এসপি) নাজির আহমেদ খাঁন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা ও সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনা-মেঘনা) সার্কেল আবদুল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হামলার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার মাজারভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনা সার্কেল) মো. আবদুল করিম বলেন, এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক জড়ো হয়ে এ হামলা করেছে। উসকানি দিয়ে মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরও হামলায় যুক্ত করা হয়েছে। চারটি মাজারে ভাঙচুর ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে আসাদপুর গ্রামের আলেক শাহর বাড়িতে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আলেক শাহর ছেলে অভিযুক্ত মহসিন বেমজা মহসিন নামের ফেসবুক আইডি থেকে গত বুধবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেন।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ করলে মহসিনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে এই ঘটনায় বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে হোমনা থানায় অভিযুক্ত মহসিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযুক্ত যুবক মহসিন (৩৫) কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামের ফকির বাড়ির আলেক শাহর ছেলে। অভিযোগ রয়েছে, এর আগে গত ২৯ আগস্টও মহসিন ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননামূলক পোস্ট করেন।
স্থানীয়রা জানান, মহানবীকে কটূক্তি করা হয়েছে এই তথ্য প্রচারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে কয়েক শ লোক একত্র হয়। তারা প্রথমে মহসিনদের বাড়িতে হামলা চালায়। প্রথমে কফিল উদ্দিন শাহের মাজার ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে মহসিনদের তিনটি বসতঘর ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরে একই গ্রামে আলাদা তিনটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালায় সংক্ষুব্ধরা। হাওয়ালি শাহ নামে পরিচিত মাজারেও আগুন দেওয়া হয়। বাকি তিনটি মাজারে ভাংচুর চালানো হয়।
জানা গেছে, গত বুধবার মহসিনকে গ্রেপ্তার করার পর স্থানীয়রা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলে মনে করেছিল। কিন্তু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গতকাল সকালে কয়েক শ মানুষ চারটি মাজারে হামলা চালায়। এ ঘটনার পর এলাকার মাজার বিশ্বাসীরা চরম আতঙ্কে আছেন।
মহসিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী শরিফুল ইসলামের অভিযোগ, 'মহসিন দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। এলাকাবাসী তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মহসিন ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট করার কথা স্বীকার করেছেন। আমরা তাঁর কাছ থেকে সেই পোস্টের প্রমাণও পেয়েছি। এরই মধ্যে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত বুধবার বিকেলে তাঁকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, 'এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা অপ্রত্যাশিত। এ অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
Comments