গাজার শিশুদের বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে রেনাদ আতাল্লাহ

যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে বিধ্বস্ত গাজার শিশুদের জন্য দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছে ছোট্ট শিশু রেনাদ আতাল্লাহ। রেনাদ শুধু সাধারণ এক শিশু নন- তিনি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং একদিন নিজের রেস্টুরেন্ট খোলার স্বপ্ন দেখেন। অবরুদ্ধ গাজায় থেকেও তিনি রান্নার ভিডিও বানাতেন, তবে তার খাদ্য আইটেমের নাম ছিল 'ওয়ার চিপস, ফেমিন (দুর্ভিক্ষের রুটি) ব্রেড, ফেমিন লাবনেহ।'-যেসব খাবার এখন গাজার করুণ বাস্তবতা।
খেলনা বা জামাকাপড় নয়, তার 'আনবক্সিং ভিডিওতে' দেখা যেত শুধু চাল আর তেলের বোতল। গাজায় মাসের পর মাস পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। এই পরিস্থিতিতে রেনাদ নিজের ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি হাজারো মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। তিনি কানাডার মানবিক সংস্থা হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল-এর অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন ফুড ক্রিয়েটরদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খাবার ও সহায়তা সংগ্রহ করেছেন। কেবল গত সপ্তাহেই তিনি দেখিয়েছিলেন, কিভাবে চার মাস পর অবশেষে কিছু সহায়তা গাজায় পৌঁছেছে।
তবে সু খবর হচ্ছে-সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ১১ বছরের এই ফিলিস্তিনি শিশু শেফ গাজা থেকে নিরাপদে ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছেন। বর্তমানে তিনি নেদারল্যান্ডসে আছেন, যেখানে তার বড় বোন নুরহান আতাল্লাহ থাকেন। তবে রেনাদের মা ও ভাইয়েরা এখনও গাজায় রয়েছেন। খবর খালিজ টাইমসের।
তিনদিন আগে তিনি ইনস্টাগ্রামে একটি কালো স্লাইডে এক শব্দ লিখেছিলেন- গুডবাই। এতে তার অনুসারীরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েন। অবশেষে শনিবার নেদারল্যান্ডস থেকে দেয়া তার নতুন পোস্টে ক্যাপশান ছিল ছোট অথচ শক্তিশালী- 'এ জেনোসাইড সার্ভাইবার'। (গণহত্যায় বেঁচে থাকা একজন)।
রেনাদের নিরাপদে পৌঁছানোর খবর প্রকাশ হতেই সামাজিক মাধ্যমে তাকে ঘিরে ভালোবাসা ও স্বস্তির ঢল নামে। তবে সেই আনন্দের সঙ্গে মিশে থাকে গাজায় থেকে যাওয়া লাখো শিশু ও পরিবারের দুঃখকথা। তার পোস্টে একটি আবেগঘন মন্তব্য করেন গাজার আরেক শিশু- আট বছরের কৃষক আহমেদের পরিবার। তাদের বার্তায় লেখা ছিল:
'আমার চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু ঝরছে। তুমি বেঁচে গেছো, এটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তি। আর তুমি যেমন সবসময় বলো- শিশুদের প্রাপ্য শুধু শিশুর মতো জীবনযাপন করা।'
যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত গাজায় শিশুদের জন্য রেনাদ হয়ে উঠেছেন এক অনন্য প্রতীক, যে স্বপ্ন দেখায়, অন্ধকারের মধ্যেও আলো জ্বালাতে পারে।
Comments