শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৯ টায়, থাকছে দুটি বিশেষ ট্রেন

দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এবার ১৯৮তম ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহ্য অনুসারে তিন দফা গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু হবে ঈদের দিন সকাল ৯ টায়। জামাতকে ঘিরে থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়।
সোমবার (১৯ মে) সকাল ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঈদুল আজহার জামাতকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জামাতে ইমামতি করবেন, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অন্য সব মাঠের ন্যায় নেই কোনো সামিয়ানা টানানোর কাজ। এটিই এই ঈদগাহ মাঠের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। খোলা আকাশের নিচে যুগ যুগ ধরে এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল আজহার জামাত। সেই সঙ্গে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মুসল্লিদের আসা-যাওয়ার জন্য এ বছরও থাকছে দুটি স্পেশাল ট্রেন।
এটি হবে এ ঈদগাহ ময়দানের ১৯৮তম ঈদুল আজহার জামাত। শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, ঈদের জামাত শুরুর আগে শটগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুঁড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হবে।
জামাতকে নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চার স্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি, পুরো ঈদগাহ মাঠ থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায়। ড্রোন ও ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ ও র্যাবের জন্য অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হবে ওয়াচ টাওয়ার, প্রস্তুত থাকবে বহু সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক এবং মেডিক্যাল টিম। এবারও শোলাকিয়া দেশবিদেশের লাখো মানুষের ঢল নামবে বলে আশা করছে আয়োজকরা।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, ঈদুল আজহার এই জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রতিবারের মতো এবারও শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে ২টি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকবে বোম ডিসপোজাল ইউনিট, শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যক্তিগত গেট তোরণ নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে শটগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হবে।
প্রস্তুতি সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল ইসলাম তালুকদার, ইমরানুল ইসলাম, সেনাবাহিনী ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজ, এনএসআইয়ের সহকারী মো. আলী আকবর হোসেন তামিম, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির রমজান আলী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল হোসাইন, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহসহ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
'শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১' ভৈরব থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে সকাল ৮টায়। আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায়, ভৈরব পৌঁছবে দুপুর ২টায়। 'শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২' ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে সকাল সাড়ে ৮টায়। আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছবে বিকাল ৩টায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজ চলাকালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গিদের অতর্কিত হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন চারজন। সেই থেকে ঈদ জামাতে বাড়তি নিরাপত্তার ওপর জোর দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জনশ্রুতি আছে, শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের অবস্থান। যুগ যুগ ধরে এখানে ঈদের নামাজ পড়ছেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে ১ লাখ ২৫ হাজার বা 'সোয়া লাখ' মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় 'সোয়া লাখিয়া'- যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত। প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন শোলাকিয়া ঈদগাহে লাখো মুসল্লির সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়, এমন বিশ্বাসে প্রতি বছর ঈদের জামাতে অংশ নেন, দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। বংশ পরম্পরায় ৬ একর আয়তনের এই ঈদগাহে নামাজ পড়ছেন অনেকে। এবার এ মাঠে ১৯৮তম ঈদুল আজহার জামাত হবে।
Comments