শেষ কর্মদিবস, যাত্রী চাপের আশঙ্কা

ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস আজ অপেক্ষা শুধু বিকেলের, কারণ তখনই শেষ হবে অফিস। এরপর টানা ১০ ছুটি। কোনো ঈদে এর আগে এত দীর্ঘ ছুটির স্বাদ পায়নি চাকরিজীবীরা। যে কারণে এবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে একটু বেশি ছুটি কাটানোর আগ্রহটা একটু বেশিই সবার। ফলে আজ শেষ কর্মদিবসের অফিস শেষে সবচেয়ে বেশি ঢাকা ছাড়বে মানুষ। সব মিলিয়ে ঘরে ফেরার তাড়ার সবচেয়ে বেশি চাপ আজ।
ট্রেন, বাস, লঞ্চ, ব্যক্তিগত পরিবহনে বুধবার (৪ জুন) বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ আজ ঢাকা ছাড়বে। এছাড়াও যাদের সামর্থ্য আছে এবং আগে টিকিট পেয়েছে এমন সর্বোচ্চ যাত্রীরা আকাশ পথেও ঢাকা ছাড়বে আজ। শেষ অফিস আজ হওয়ায় মূলত ঢাকা ছাড়ার যাত্রীর সংখ্যা আজ সবচেয়ে বেশি।
গত ২৫ মে বিক্রি অনলাইনে ছাড়া হয়েছিল আজকের অর্থাৎ ৪ জুনের ট্রেনের টিকিট। সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর আসনের টিকিট বিক্রি শুরু হলে প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে ২ কোটি ৭৬ লাখ হিট করেছিল টিকিট প্রত্যাশীরা। সেদিই বুঝা গিয়েছিল ঈদ যাত্রায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে সবচেয়ে বেশি যাত্রীর চাপ সামলাতে হবে আজ (৪ জুন) নির্ধারিত সব ট্রেনগুলোতে। বিশেষ করে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে সবচেয়ে বেশি যাত্রী চাপ সৃষ্টি হবে। যারা ভাগ্যবান তারা তো আসনের টিকিট পেয়েছে, যারা আসন পাননি তারও আজ স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে বগিগুলোতে ভিড় জমাবেন। সব মিলিয়ে উপচে পড়া ভিড় হবে আজকের সব ট্রেনগুলোতে।
একইভাবে কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসগুলোতেও আজ বিকেল থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত বাসগুলোতেও সবচেয়ে বেশি যাত্রী চাপের আশঙ্কা করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। গত ১৫ দিন ধরেই আজকের বাসগুলোর চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাদের মতে আজকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ বাসযোগে ঢাকা ছাড়বে। অন্যদিকে ঢাকার অন্যান্য বাস টার্মিনাল থেকেও একই অবস্থার কথা ভেবে নিয়ে তেমন প্রস্তুতিও নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোতে সবচেয়ে বেশি যাত্রীরা আজ ঢাকা ছাড়বেন।
জীবিকার তাগিদে সারাদিন কাজ আর কাজ। একঘেয়েমি জীবন। আর এ একঘেয়েমি জীবনের সাময়িক বিরতি দিয়ে কর্মজীবী এসব মানুষের সামনে আসে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মুহূর্ত। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার ঐতিহ্য বাঙালির দীর্ঘ দিনের। তাই শত ভোগান্তি বিড়ম্বনা পেরিয়ে মানুষ ছুটে নাড়ির টানে। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বা প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে সবার ব্যস্ত ছুটে চলা। সে কারণে আজ রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল সহ এগুলোতে শুধু মানুষ আর মানুষের উপস্থিতি থাকবে। হবে জনস্রোত। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে সকলের ব্যস্ত ছুটে চলার দৃশ্য থাকবে সর্বত্রই। টিকেটের অপ্রতুলতা, বিলম্বে ট্রেন, সড়কে যানজট, সময় মত বাস না আসার ভোগান্তি সহ নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যারা রাজধানী ছাড়বে তাদের চোখেমুখে থাকে ঘরে ফেরার উচ্ছ্বাস আর আনন্দ তাদের যেন ছেয়ে যায়। কাঁধে ব্যাগ, কেউ পরিবারের সদস্য নিয়ে আর কেউ হয়তবা একাই, কেউ কেউ কোলে শিশু নিয়ে বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশনের দিকে তাদের স্রোত থাকবে। এ স্রোত হবে নাড়ির টানে ঘরে ফেরার স্রোত।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাজেদুল ইসলাম, ঈদের আগে আজ শেষ কর্মদিবস তার আজ। তিনি বলেন, খুব কষ্টে অনেক ট্রাই করে আজ রাতের লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটতে পেরেছিলাম নির্ধারিত দিনেই। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের ট্রেন ধরার জন্য অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে পরিবার সহ বের হবো। আমরা যদিও আসনের টিকিটি পেয়েছি, তবুও ভয় পাচ্ছি। কারণ আজকের রাতের ট্রেনগুলোতে যাত্রীর সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে। আমরা টিকিট পেয়েও ট্রেন উঠতে পারবো কী না বা নিজের সিটের কাছে পৌঁছাতে পারবো কী না তা নিয়ে শঙ্কিত। আমার পরিচিত যত জনের সঙ্গে কথা হয়েছে তারা জানিয়েছে আজ তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাবে, ফলে আগে থেকেই ধারণা করে নেওয়া যায় আজ সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে।
খালিদ হোসেন নামের আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমরা আজকের জন্য প্রথমে ট্রেনের টিকিটের চেষ্টা করেছিলাম, পরে টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাসের টিকিট কেটেছি। যাব রাজশাহী। ট্রেনের টিকিট পেলে যানজট ছাড়াই যেতে পারতাম কিন্তু তা না পাওয়ায় অতিরিক্ত বেশি টাকা দিয়ে বাসের টিকিট কেটেছি। ধারণা করছি আজ রাতে সর্বোচ্চ যানজট থাকবে সড়কে, সেই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষ আজ ঢাকা ছাড়বে।
কল্যাণপুর বাস কাউন্টের উত্তরবঙ্গগামী একটি বাসের কাউন্টার ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, আজকে বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বাসগুলোর সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। টিকিটিও বিক্রি হয়েছে সবগুলো। এছাড়া কাউন্টারে যাত্রীরা টিকিটি কাটতে এসে আজকের টিকিটিই বেশি চাচ্ছিল। ধারণা করা যাচ্ছে ট্রেনের মতো সড়ক পথেও আজ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রীরা আজ ঢাকা ছাড়বে।
Comments