হে ড়ে থি থি ব ব সংস্কৃতি’ ছি! বুদ্ধিজীবী

বুদ্ধিজীবীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তারা সমাজের উচ্চশিক্ষিত ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষ ব্যক্তি। যাঁরা মানসিক শ্রম ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজের সমালোচনা, গঠনমূলক নেতৃত্ব ও নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। তাঁরা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ নন, বরং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং নিজস্ব চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সমাজের মঙ্গল ও বিকাশে অবদান রাখেন।
তারা জটিল ধারণা নিয়ে চিন্তা করেন, বিশ্লেষণ করেন এবং নিজস্ব জ্ঞান-বুদ্ধি ব্যবহার করে সমাজকে প্রভাবিত করেন।
পুরাঘটিত অতীত মুখে বর্তমান স্তুতি বিশেষণঃ
মহারাজ যযাতির এবং দানবরাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠার পুত্র অনু।
অনু যযাতির 'জরা' গ্রহণ করতে চাননি। ফলে যযাতি তাঁকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, অনু বৃদ্ধবয়সে অনেক কষ্ট ভোগ করবেন। অনু অনুতপ্ত হয়ে পিতার নিকট ক্ষমা চাইলে যযাতি বলেন, তাঁর বংশ অনেক বিখ্যাত হবে। এবং ভবিষ্যৎকালেও তাঁর বংশের গুণগান করা হবে। এই বংশেরই এক রাজা ছিলেন উশীনর। ইনি একবার এক পায়রাকে বাজপাখির শিকার থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেই নিজেকে বাজপাখির খাদ্য হতে চেয়েছিলেন। এই উশীনরের পুত্র শিবি চারটি জনজাতির সৃষ্টি করেন। তাঁর মধ্যে বিখ্যাত দুটি, মদ্র ও কেকয়। রামায়ণের দশরথপত্নী কৈকেয়ী কেকৈয়ী দেশের এবং মহাভারতে নকুল-সহাদেবের মা মাদ্রী মদ্র দেশের মেয়ে।
রাজা মহামনা থেকে অনুবংশ দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। একটি হলো উশীনরের ধারা অপরটি উশীনরের ভাই তিতিক্ষু-র ধারা। তিতিক্ষু-র বংশধারায় পরবর্তীকালে বলির জন্ম হয়। বলিরাজের ছয় পুত্র হয়। যথাঃ অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সূহ্ম, পুণ্ড্র, ওড্র। এই ছয় পুত্রের নামে পরবর্তীকালে ছয়টি দেশের সৃষ্টি হয়।
অঙ্গঃ মুঙ্গের এবং ভাগলপুর, এবং উত্তর কোশী নদী পর্যন্ত, কোশী নদীর উপরে বিভাণ্ডক মুনির আশ্রম। যেখান থেকে ঋষ্যশৃঙ্গ কে অঙ্গদেশ আনা হয়েছিল। বঙ্গঃ বর্তমান- পশ্চিমবঙ্গ, ও বাংলাদেশের অনেক অংশ। কলিঙ্গঃ বর্তমান-আসাম। পুণ্ড্রঃ বর্তমান- বাংলাদেশের উত্তরাংশ। ওড্রঃ ওড়িষ্যা।
এই অনুর বংশধরদের মধ্যে শেষের দিকের এক বংশধর ছিলেন অধিরথ। যিনি কুন্তীপুত্র কর্ণের পালক পিতা ছিলেন। অধিরথের চার পুরুষ আগের এক রাজা জয়দ্রথ এক কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন যিনি, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের সংকর। সেই কারণে-সেকালের নিয়ম অনুযায়ী জয়দ্রথের পুত্র-পৌত্ররা সবাই সূত, যারা রাজা-মহারাজাদের গুণ-কীর্তন করেন।
পুরাঘটিত বর্তমান কেউটে সূত সর্পকাল মুখে আধুনিকতার পথঃ
মহাভারত সময় পর্বের শেষে স্বর্গ গমনের পথে যুধিষ্ঠির বাদে এক এক করে পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদী সবাই মারা যান। মহাভারত চরিত্রে অন্যদের মতো উত্তরসূরি হিসেবে জয়দ্রথের পুত্র পৌত্রদের হাত ধরে রাজা-মহারাজাদের গুণ কীর্তনের যে বিবর্তিত ধারা শুরু হলো, তা পরে আর কেউও নিবর্তিত করতে পারেন নি। মূলত জয়দ্রথের পুত্র পৌত্রদের মুখে কলমে আচার আচরণ পিঠে চেপে এই যে, সুক্ষ্ম বুদ্ধিদীপ্ত কালের কথন বুদ্ধি চর্চা শুরু, পরে নানান ব্রত আচার অনাচার শুদ্ধাচার পেরিয়ে নানা ধর্মগুরু মুখ সেরে যে যার মতো সুক্ষ্ম স্থুল কালের কথনে একজন কৃষকও নিজেকে বুদ্ধিজীবী মনে করেন। তারাও — হালচাষ করার সময়ে নিজেদের উদ্ভাবিত গৃহপালিত গরু মোষের ভাষায় লেজের গোড়ায় মোচড় দিয়ে বলেন, 'হে ড়ে থি থি ব ব'।
পশু লেজের এই যে, 'হে ড়ে থি থি ব ব' মোচড় বুদ্ধিজীবী ভাষা পেরিয়ে নানারকমের পশু পাখি সরীসৃপ জলজ প্রাণী ভাষা রপ্ত করে পশু পাখি সমাজও মানুষদের মনিব রাজা সম্রাট মনে, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ মনে করে স্তুতি করে অকাতরে নিজেরা মানুষদের আহার শ্রমে নিজেদের বিনিয়োগ করেছে।
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কালের বুদ্ধিজীবী
শতভাগ বুদ্ধিজীবি সক্রেটিস যদি স্বাভাবিক জৈবিক শাসন প্রক্রিয়ায় মারা যেতেন; মানসভ্যতার ইতিহাসে তাঁর যে কত কত অবদান থাকত, তা সংরক্ষণ করে রাখতেই হুলুস্থুল লেগে যেত।
দেশ পিতা মাতার ঘরে বাইরে, হে ড়ে থি থি ব ব মার্কা বুদ্ধিজীবী। প্রতিদিনের সংসার নিয়মে আউলা বাতাস বাউলা চুলে জয়গুরু অজাচার নিষিদ্ধ ভোজ সেরে, সবেমাত্র দেশ পিতা মাতা ভোজে বুদ্ধিজীবিরা হাত পাকিয়েছেন। এইত! ক'দিন আগেও যে জাতীয় স্তাবক বুদ্ধিজীবীর সামনে পেছনে ডানে বামে নানা বর্ণচিহ্নিত ফুল পুলিশ মিলিটারি বন্দুক শোভা পেত; তারা এখন কেউই নাই। রাষ্ট্রের নানা ভোজ সেরে তাদের মাঝে কেউ কেউ দরবেশ কেউ বা হঠাৎ মানবতার ফেরিওয়ালা।
আদালত শুরু। রাষ্ট্রখেকো বুদ্ধিজীবীদের কোমরে মোটা মোটা সাদা দড়ি। তারা জাতীয় আত্মপক্ষ সমর্থনে কেউ কেউ বলে চলেছেনঃ
'হুজুর আদালত! আমি জাতীয় বুদ্ধিমান বুদ্ধিজীবী। একটি জাতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবারে জন্ম। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলাম। আমি এই ব্যাপারে কিছু জানি না।
তবে— 'আজ সকাল হতে না হতেই আমার অফিসের দারোয়ান, কলিমউল্লাহ, কেরানী সলিমুল্লাহ বাহাদুর, আমার পীর বাইয়াতে রিদওয়ান সুফি মাজা হারুন পলাতক। তারা সকল কিছু জানতেন। আপনার চেয়ারে যদি কোনোদিন বসতে পারতাম, আপনাকে কড়া গন্ডা হিসাবে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে বলে দিতাম'।
নিস্তব্ধ আদালত। জজ সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ়। শেষমেশ আদেশে লিখে চলেছেন, আসামিরা হাজতে যাবে — ছি! বুদ্ধিজীবী।
(নৈরাশ্যের দলিল ডাকনাম শূন্য)
Comments