জোরে হাসলে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে
বিশ্বজুড়ে প্রায় সবারই এটা জানা আছে যে, হাসির কারণে মেজাজ ভালো হয় এবং চাপমুক্ত রাখে। এটি পেশী শিথিল করে, উত্তেজনা কমায় এবং সামগ্রিক সুস্থতায় সহায়তা করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্তি বা বেশি হাসা গুরুতর স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণ হতে পারে। বিএমজেতে প্রকাশিত গবেষকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত হাসি সিনকোপ, কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া ও খাদ্যনালী ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থার কারণ হতে পারে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রক্রিয়াগুলো স্পষ্টতভাবে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ বা স্নায়বিক রোগ রয়েছে। এসব মারাত্মক ঘটনাগুলো ব্যতিক্রমভাবে অস্বাভাবিক হলেও হাসির মতো প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর কার্যক্রম ছোট ছোট হলেও উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি বহন করে। এছাড়া প্রশ্ন থেকে যায়, জোরে বা অতিরিক্ত হাসি থেকে কী মৃত্যু হতে পারে?
অতিরিক্ত হাসি কতটা প্রভাব ফেলে শরীরে:
হাসি শরীরের একাধিক সিস্টেমকে একইসঙ্গে সম্পৃক্ত করে। এটি ডায়াফ্রাম, শ্বাসযন্ত্রের পেশী ও মুখের পেশীগুলোকে সক্রিয় করে এবং হৃদস্পন্দন ও অক্সিজেন গ্রহণ বৃদ্ধি করে। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে, এসব প্রভাবগুলো ক্ষতিকারক নয়, আবার উপকারীও নয়। তবে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত হাসি সাময়িকভাবে হৃদযন্ত্রের বা শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। ব্যক্তিভেদে রক্তচাপ ও বক্ষঃস্থ চাপ হঠাৎ বেড়ে গিয়ে জ্ঞানও হারাতে পারেন।
জোরে হাসার স্বাস্থ্যঝুঁকি:
মূর্ছা যাওয়া: তীব্র হাসির কারণে রক্তচাপ সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে। এতে অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাকে হাসি প্ররোচিত মূর্ছা যাওয়া বলা হয়।
হৃদরোগের সমস্যা: আগে থেকেই যদি হৃদরোগ থাকে, তাহলে অতিরিক্ত হাসা হলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারেন।
খাদ্যনালী ফেটে যাওয়া: এটি খুবই কম ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে যে, তীব্র হাসির চাপের কারণে খাদ্যনালী ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি এমন প্রক্রিয়া, যার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এসব ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক। তবে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ করে যাদের দুর্বলতা রয়েছে।
কেন হাসি ঝুঁকিপূর্ণ হয়:
হৃদরোগ: তীব্র হাসির কারণে আগে থেকেই বিদ্যমান অ্যারিথমিয়া বা দুর্বল হার্টের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
স্নায়বিক রোগ: সিউডোবুলবার প্রভাবের মতো অবস্থা নিয়ন্ত্রিত হাসির কারণ হতে পারে। যা আপনার শরীরের ওপর শারীরিক চাপ ফেলতে পারে।
পাকস্থলীর দুর্বলতা: বিরল খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর অস্বাভাবিকতা চাপের কারণে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
অতিরিক্ত হাসির মানসিক ও সামাজিক দিক:
হাসি স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক হয়। কিন্তু কখনো এটি অতিরিক্ত বা নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে। আবেগগত কারণ, চাপ বা স্নায়বিক রোগ ক্রমাগত হাসি হওয়াকে উস্কে দিতে পারে। যদিও হাসি নিজেই স্বাস্থ্যকর। তবে মানসিক কারণগুলো অতিরিক্ত শারীরিক চাপ তৈরির সম্ভাবনা রাখে, বিশেষ করে যাদের অন্তর্নিহিত শারীরিক সমস্যা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাসির অস্বাভাবিক ধরনগুলো শনাক্ত করে সময়মত চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
নিরাপদ হাসির প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
হাসি কখনো আটকে রাখা যায় না। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য হাসি সংযম করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে- হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে হাস্যকর যেকোনো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা। ঘন ঘন অনিয়ন্ত্রিত হাসি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং হাসির ঢেউ কমাতে চাপ কমানো এবং শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করা।
Comments