প্রতিদিন কফি পানে হার্টের ওপর যে প্রভাব পড়ে

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় কফি। ক্যাফেইনযুক্ত এই পানীয়টির নানান উপকার রয়েছে। এমন অনেকেই আছেন যারা দিনের শুরুই করেন কফি পানের মধ্যে দিয়ে। নিয়মিত কফি পান করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় কফি পানের প্রভাব কেমন হতে পারে সে বিষয়ে। বিশেষ করে হার্ট বা হৃদযন্ত্রের জন্য কফি ভালো নাকি খাবার সে বিতর্কও রয়েছে। এবার এ বিষয়ে কথা বলেছেন ভারতীয় কার্ডিওলজিস্ট ডা. বিকাশ কোহলি।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে ডা. কোহলি বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে এক কাপ কফি পান করি। দিনের শুরুতে এই ছোট্ট অভ্যাস আমার মনে ও শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে কফির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আমি নিজেই খতিয়ে দেখেছি।
হৃদযন্ত্রের জন্য কফির উপকারিতা
দ্য অক্সনার জার্নালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন এক থেকে তিন কাপ কফি পান হৃদযন্ত্রের জন্য নিরাপদ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ কফি পান করলে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস পায়। ডা. কোহলির মতে, প্রতিদিন এক কাপ কফি হার্ট ভালো রাখে। এটি হার্ট ফেইলিওর বা অনিয়মিত হার্টবিটের ঝুঁকি কমায়। তাই যারা প্রতিদিন সকালে এক কাপ কফি পান করেন, তাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
একাধিক গবেষণা বলছে, প্রতিদিন এক কাপ কফি খাওয়া হৃদযন্ত্রের জন্য নিরাপদ। সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে ক্যাফেইনের কারণে সামান্য প্রিম্যাচিউর ভেন্ট্রিকুলার কনট্রাকশন হলেও তা ক্ষতিকর নয়। ডা. কোহলি বলেন, যদি আপনার ক্যাফেইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখা যায়, তবে প্রতিদিন এক কাপ কফি একেবারেই নিরাপদ।
কফির অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা: বিভিন্ন সময়ে করা গবেষণায় কফির একাধিক উপকারিতা উঠে এসেছে। এই পানীয়টি সুস্থ থাকতে দারুণ কাজে দেয়। জনপ্রিয় এই পানীয়টি পানে যেসব উপকার মিলবে:
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস: নিউট্রিয়েন্টস জার্নালের গবেষণা অনুযায়ী নিয়মিত কফি খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেমন ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি পরিমিতভাবে কফি পানকারীদের মধ্যে মেটাবলিক ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
স্নায়ু ও মানসিক স্বাস্থ্য: ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ এন্ডোক্রিনোলজি–এর গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পানকারীদের পার্কিনসনস এবং অ্যালঝাইমারসের মতো স্নায়ুজনিত রোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং অন্যান্য ফাইটোকেমিক্যালস মস্তিষ্কের কোষকে রক্ষা করে, স্নায়ুতে প্রদাহ কমায় এবং বয়সজনিত স্নায়ু ক্ষয় ধীর করে।
ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস: কিছু গবেষণায় যেমন ক্যানসার লেটারস–এ প্রকাশিত হয়েছে, নিয়মিত কফি পান লিভার ক্যান্সার, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং কিছু অন্যান্য ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। এর কারণ হিসেবে কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলোকে ধরা হয়েছে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও ক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কফি পানের সতর্কতা
মার্কিন এফডিএ-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দিনে সর্বাধিক ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন নিরাপদ। এক কাপ কফিতে প্রায় ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। ডা. কোহলির পরামর্শ, সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে চিনি বা অতিরিক্ত ক্রিম ছাড়া ব্ল্যাক কফি পান করুন।" সকালে কফি খেলে দিনের বেলায় এনার্জি বাড়ে এবং ঘুমের সমস্যাও কম হয়।
যারা ক্যাফেইনে অত্যন্ত সংবেদনশীল, উচ্চ রক্তচাপের রোগী বা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের কফি খাওয়ার পরিমাণ সীমিত করা উচিত। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
Comments