ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের কারণ জানুন

সুস্থ থাকতে রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে ঘুমের মানও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়টি অনেকেই খেয়াল করি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্লিপ অ্যাপনিয়া এমন একটি ঘুমের সমস্যা যেখানে ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ব্যক্তি হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে হাঁসফাঁস করতে পারেন। এই অবস্থা শুধু অস্বস্তিকরই নয়, হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিরও কারণ হতে পারে।
এ বিষয়ে ভারতের এশিয়ান হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট–ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. প্রীতেক চৌধুরী জানান, স্লিপ অ্যাপনিয়া সবচেয়ে সাধারণ ঘুমের রোগগুলোর একটি। শ্বাসপ্রশ্বাসে বারবার বাধা হৃদযন্ত্রের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার জন্ম দেয়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া হৃদযন্ত্রের জন্য কে বিপজ্জনক: ডা. চৌধুরীর মতে, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়। আর তখন মস্তিষ্ক শরীরকে জাগিয়ে তোলে যাতে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়। এভাবে রাতজুড়ে বারবার অক্সিজেনের ঘাটতি ও হঠাৎ জেগে ওঠা হৃদযন্ত্রের জন্য এক ধরনের তীব্র চাপ তৈরি করে। এই অবস্থায় রক্তচাপ ও হার্ট রেট বেড়ে যায়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিদমিয়া এবং হৃদযন্ত্রের গঠনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি: কার্ডিওলজিস্টরা বলেন, ঘনঘন অক্সিজেনের ঘাটতি রক্তনালিতে স্থায়ী ক্ষতি করে। রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা কমে গিয়ে সেগুলো শক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে হৃদ্ রোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে।
অনিয়মিত হার্টবিট
দীর্ঘদিনের স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনসহ অনিয়মিত হার্টবিট দেখা দিতে পারে। অক্সিজেনের ওঠানামা ও বারবার অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপকে অস্থির করে তোলে। ডা. চৌধুরী সতর্ক করে বলেন, এই অবস্থাই রাতের বেলায় আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি বাড়ায়।
হার্ট ফেইলিওর
চিকিৎসক আরও জানান, স্লিপ অ্যাপনিয়া দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল করে দিতে পারে। এর ফলে হার্ট ফেইলিওর বা হৃদ্যন্ত্র বিকল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমনকি যাদের আগে থেকেই হার্ট ফেইলিওর আছে, তাদের ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এর ফলে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া শুধু ঘুমের মান নষ্ট করে না, বরং হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকিও তৈরি করে। তাই ঘুমের মধ্যে হঠাৎ হাঁসফাঁস করে জেগে ওঠা বা ঘনঘন শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Comments