ঘুমের যেসব অভ্যাস নীরবে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে

পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থ জীবনের অপরিহার্য অংশ। তবে সবার ঘুমের ধরণ এক রকম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সম্প্রতি এক গবেষণায় জানিয়েছেন, মানুষের ঘুমের চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধরন রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে ভিন্ন প্রভাব ফেলে।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে সাইকোসোমাটিক মেডিসিন জার্নালে। প্রায় ৩,৭০০ জন অংশগ্রহণকারীর ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা চারটি ঘুমের ধরণ চিহ্নিত করেন—
ভালো স্লিপারস: যাদের ঘুমের অভ্যাস স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর।
ন্যাপারস: যারা সাধারণত ভালো ঘুমালেও নিয়মিত দিনের বেলা ঝিমুনি বা ঘুমিয়ে নেন।
উইকেন্ড ক্যাচ-আপ স্লিপারস: সপ্তাহের দিনে কম ঘুমিয়ে ছুটির দিনে বেশি ঘুমিয়ে ঘাটতি পূরণ করেন।
ইনসমনিয়া স্লিপারস: যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, যেমন: ঘুম আসতে দীর্ঘ সময় নেয়া, কম সময় ঘুমানো এবং দিনে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা।
গবেষকরা দেখেছেন, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি 'ন্যাপারস' ও 'ইনসমনিয়া স্লিপারস' গ্রুপে পড়েছেন।
ইনসমনিয়া স্লিপারদের ঝুঁকি বেশি: ফলাফলে দেখা যায়, যারা ইনসমনিয়ায় ভুগছেন তাদের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্নতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা ডা. সুমি লি জানান, এই ধরনের ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময়েও স্বাভাবিক ঘুমের ধরনে ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, যদি দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের মান উন্নত করা যায়, তবে এর সামগ্রিক প্রভাব আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত ইতিবাচক হবে।
গবেষণা নিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ঘুমের ধরন বুঝে রোগীদের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হবে। বিশেষ করে ইনসমনিয়া আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা নেয়া জরুরি। অন্যদিকে, দিনের বেলা ঘুমের অভ্যাস নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, যাদের রাতে মোটামুটি ভালো ঘুম হলেও নিয়মিত ন্যাপ নেয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের ক্রনিক রোগের ঝুঁকি দেখা গেছে।
ঘুম কেবল বিশ্রামের সময় নয়, এটি শরীর ও মস্তিষ্কের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য ধাপ। তাই ঘুমের মান ও অভ্যাসের প্রতি গুরুত্ব দিলে ভবিষ্যতের নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
Comments